ইউএসএ-তে পড়তে আসা? জানুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ আপনার নিরাপত্তা ও সাফল্যের জন্য।
বর্তমান ট্রাম্প অ্যাডমিনেস্ট্রেসন এর অভিবাসন নীতি ও আইস ( United States Immigration and Customs Enforcement ) এর ধরপাকড়ে অনেকেই অনেক ভীত। প্রতদিন শত সহস্র মানুষকে ধরে ধরে দেশে পাঠান হচ্ছে, তবে ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীরা যদিও এই ধরপাকড়ের বাইরে, তথাপি, কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় থকে কয়েকজন শিক্ষার্থীকেও দেশে চলে যেতে হয়েছে, স্টুডেন্ট ভিসার শর্ত অমান্য করার অপরাধে। একজন শিক্ষক হিসেবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান এবং চ্যান্সেলর হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে, আমি কিছু পরামর্শ শেয়ার করবো, যাতে আপনি নিরাপদ, আইনগতভাবে সঠিক, এবং সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারেন। আপনার সমস্ত ইন-পার্সন ক্লাসে অংশ নিন শারীরিকভাবে ক্লাসে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। স্কুল যদি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমতি না দেয়, তাহলে শুধু অনলাইনে অংশ নেওয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি থাকুন। অন্য স্টেটে থেকে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করবেন না। এটি আপনার ভিসার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ভালো গ্রেড বজায় রাখুন। অনেক স্কুল শুরুতে স্কলারশিপ দেয়, কিন্তু তা ধরে রাখতে হলে প্রথম টার্মের পর ভালো ফলাফল করতে হবে। ফুল-টাইম স্টুডেন্ট হিসেবে থাকুন আন্ডারগ্র্যাড হলে কমপক্ষে ১২ ক্রেডিট এবং গ্র্যাজুয়েট হলে ৯ ক্রেডিট নিতে হবে। এর কম হলে ভিসা সমস্যায় পড়বে। ইমেইল, টেক্সট, এবং ক্লাস প্ল্যাটফর্ম (যেমন Canvas) প্রতিদিন চেক করুন। স্কুলের বার্তাগুলোর উত্তর দিন এবং কেউ ফোন করলে ধরুন। যুক্তরাষ্ট্রের আইন এবং আপনার স্কুলের নিয়ম মেনে চলুন। অপ্রাপ্তবয়স্কদের মদ পান, চুরি, মাদক-এইসব ছোট খাটো কাজও বড় সমস্যায় ফেলতে পারে এবং ইমিগ্রেশন ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। ঠিকানা, ফোন নম্বর বা ভিসা সম্পর্কিত কিছু পরিবর্তন হলে স্কুলকে জানান। সাধারণত ১০ দিনের মধ্যে জানাতে হয়। স্কুলের অনুমতি ছাড়া কাজ করবেন না। অন-ক্যাম্পাস কাজ বা CPT/OPT ইন্টার্নশিপের জন্য অনুমতি নিতে হবে। বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আন্তর্জাতিক স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজরের (DSO) সাথে কথা বলুন। আপনি কাজ করতে চান, ভ্রমণে যেতে চান, বা ছুটি নিতে চান—আগে জিজ্ঞাসা করুন। বন্ধু তৈরি করুন এবং নিজের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন। এখানে যাদের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে—সহপাঠী, শিক্ষক, মেন্টর—তারা আপনার ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। মনে রাখবেন: আপনার নেটওয়ার্ক হলো আপনার নেট ওয়ার্থ । গবেষণার কাজে যুক্ত হন এবং একাডেমিক পেপার প্রকাশ করুন। এটি আপনার রেজ্যুমে শক্তিশালী করে, চাকরি পাওয়ায় সহায়তা করে, ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে, এমনকি ভবিষ্যতে পিএইচডি করার পথও তৈরি করে। পড়াশোনার পাশাপাশি প্র্যাকটিক্যাল স্কিল তৈরি করুন। ডিগ্রি ভালো, কিন্তু চাকরির বাজারে স্কিল আরও জরুরি। স্কিল থাকলে CPT, OPT, এমনকি H1B-র মত ভিসার জন্যও সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সবাইকে শ্রদ্ধা করুন এবং সদয় থাকুন আপনি একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশের অংশ। যেকোনো ধর্ম, জাতি বা বিশ্বাসের মানুষ—সবাই সম্মান পাওয়ার যোগ্য।কাউকে কখনো মারবেন না, হেনস্থা করবেন না, বা আঘাত করবেন না—শারীরিক, মৌখিক বা অনলাইনে। বিশেষ করে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স বা যৌন নিপীড়ন—এসব অপরাধ আমেরিকায় গুরুতর এবং এর পরিণতিতে গ্রেফতার ও ডিপোর্ট হতে পারেন। এখানে কোনো ছাড় নেই। পরিষ্কার সম্মতি ছাড়া কাউকে স্পর্শ করবেন না। মানুষের ব্যক্তিগত সীমা ও স্পেসকে সম্মান করুন মিথ্যা বলবেন না বা জাল কাগজপত্র ব্যবহার করবেন না। ক্লাস, চাকরি, বা ইমিগ্রেশন যেকোনো কিছুর জন্য সততা অপরিহার্য। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সাবধান থাকুন। কী পোস্ট করছেন তা ভেবে করুন—স্মার্ট, শ্রদ্ধাশীল এবং দায়িত্বশীল থাকুন। শুধু টাকা আয়ের চিন্তায় পড়াশোনা থেকে বিচ্যুত হবেন না। আপনার শিক্ষা আপনার সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ—তুচ্ছ আয়ের লোভে সবকিছু ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না। স্কুলের আচরণবিধি অনুসরণ করুন। শ্রদ্ধাশীল, পেশাদার এবং সৎ আচরণ করুন—শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতর এবং বাইরে দুটোতেই। সহায়তা প্রয়োজন হলে সাহায্য চেয়ে নিন। সমস্যা বাড়ার আগেই কারো কাছে যান—স্কুলে অনেক সাপোর্ট সিস্টেম আছে। আপনি একা নন। আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, যুক্তরাষ্ট্রে আপনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্যে আবেদন করেছিলেন এখানে থাকাকালীন সময়ে কতিপয় নিয়ম মেনে চলবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেবার পর। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ গুলোও তাদের শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ডের জন্যে ফেডারেল সরকারের কাছে নিয়মিত জবাবদিহি করতে হয়। আপনি কোনও বিপদে পড়লে বা আপনার শিক্ষার্থী ভিসা প্রশ্নের সম্মুখীন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ই সবার আগে আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে, বিশ্ববিদ্যালয়কেও আপনার গতিবিধি ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত রাখাটা আপনার জন্যেই অধিক মঙ্গল। বিস্তারিত আরও জানার থাকলে আমাকে সরাসরি লিখতে পারেন এখানে- [email protected]