প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাবে নারী ও শিশু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি জানিয়েছে তামাক বিরোধী মায়েদের ফোরাম। বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনষ্টিটিউট বাংলাদেশে ২০ জন মায়েদের নিয়ে নারী মৈত্রী আয়োজিত “তামাক বিরোধী মায়েদের ফোরাম” গঠন বিষয়ক সভায় এ দাবি জানান তারা। তামাক বিরোধী মায়েদের ফোরাম এর আহ্বায়ক ছিলেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এর সাবেক অতিরিক্ত সচিব শিবানী ভট্টাচার্য্য। যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং একজন সফল সাংবাদিক মা শাহনাজ পলি ও একজন শিক্ষিকা মা আফসানা নওরিন।নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন মো. আব্দুস সালাম মিয়া,প্রোগ্রামস ম্যানেজার,ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশ।অনুষ্ঠানের মূল বিষয় উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নাছরিন আকতার। তিনি বলেন,বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ লোক তামাক ব্যবহার করে এবং তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ মারা যায়। তাই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশ করা প্রয়োজন। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত খসড়ায় যে বিষয়গুলো প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা; তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা; তামাক পণ্যের সব ধরনের খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা; ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা। দেশকে তামাকের ভয়াবহ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আজকের এই তামাক বিরোধী মায়েদের ফোরাম কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন যা তামাকমুক্ত সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করবে।তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ফোরামের সদস্যগণ যথাযথ ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করেন ফোরাম এর আহ্বায়ক শিবানী ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, ধূমপান না করেও পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হয় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ। যার মধ্যে বেশি ক্ষতির শিকার হন নারী ও শিশুরা। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নারীদের অকালে গর্ভপাত, অপরিণত শিশুর জন্ম, স্বল্প ওজনের শিশু, গর্ভকালীন রক্তক্ষরণ, প্রসবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, মৃত শিশুর জন্ম দেয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষায় এই ফোরাম তামাক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবিতে নিরলস সমর্থন ও পরামর্শ দিবে। পাশাপাশি নিজের পরিবারকে তামাকের প্রভাবমুক্ত রাখবে এবং অন্যান্য মায়েদের সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে। এছাড়া, তামাক কোম্পানির কূটকৌশল বা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে বাধাগ্রস্ত করার বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থান গ্রহণ করবে বলে আশ্বাস জানান তিনি।যুব সমাজকে তামাকের ভয়াল ছোবল থেকে রক্ষায় মায়েরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন আবদুস সালাম মিয়া। তিনি বলেন,"তামাকের প্রতি আসক্তি যুবসমাজকে ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকার জগতে। গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো জরিপ এ ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে পরিচালিত প্রতিবেদনে দেখা যায় ভারত,ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশে ধূমপান আসক্ত কিশোর-কিশোরীর হার সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে প্রায় ১২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী নিয়মিত ধূমপানে আসক্ত।তাই প্রত্যেক মায়েদের এই বিষয়ে সোচ্চার এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশের জন্য নিজ অবস্থান থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।এছাড়াও ফোরামের অন্যান্য সদস্যগণ তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী প্রস্তাব দ্রুত পাশের জোর দাবি জানান।এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, লেখক ও কলামিস্ট সপ্না রেজা,ভিউজ বাংলাদেশ এর নিউজ এডিটর মারিয়া সালাম, ইত্তেফাক এর সিনিয়ির রিপোর্টার রাবিয়া হোসেন বেবি এবং খেয়া মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা এর প্রেসিডেন্ট ফারজানা শাম্মি সহ বিভিন্ন পেশার মায়েরা।