এনআরবি লাইফ

নিউইয়র্ক ও ভার্জিনিয়ায় উদযাপন শারদীয় দুর্গোৎসব

post-img

‘যা দেবী সর্বভুতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা/নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমো’ মন্ত্রে গোটা মানবতার সুখ-শান্তি আর সমৃদ্ধি কামনায় যুক্তরাষ্ট্রে উদযাপিত হলো শারদীয়া দুর্গোৎসব। নিউইয়র্কে শ্রীকৃষ্ণ মন্দির, ভার্জিনিয়ায় নীলাচল সর্বজনীন শারদ উৎসববের পূজা অর্চনা গেল সপ্তাহে সম্পন্ন হয়েছে। 

বাংলাদেশ পূজা সমিতির ‘৩৩তম দুর্গাপূজা’র অনুষ্ঠান হবে নিউইয়র্ক সিটির ফ্রেশ মেডোজে গুজরাট সমাজ মিলনায়তনে ৮ ও ৯ অক্টোবর। এ ছাড়া নিউইয়র্ক, নিউজার্সি এবং পেনসিলভেনিয়া স্টেটের প্রবাসীদের উদ্যোগে আরো ৩০টির মত মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপনের সংবাদ এসেছে। প্রতিটি মন্ডপেই বিপুল লোকসমাগম ঘটে। সকলেই ছিলেন ধর্মীয় সম্প্রীতির পরম বন্ধনে। নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায় ‘বাংলা ক্লাব’র পূজানুষ্ঠানের আয়োজনেও ছিলেন কয়েকজন মুসলমান যুবক। এভাবেই বাঙালি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্য সমুন্নত হয়েছে বহুজাতিক এ সমাজে। 

জ্যামাইকায় শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের পূজা-অর্চনায় নেতৃবৃন্দ

পূজা-অর্চনা চলাকালে সোমবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের শীর্ষ নেতারা সেখানে গিয়ে সকলের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের অন্যতম উপদেষ্টা একুশে পদকপ্রাপ্ত কন্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়, ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারি, সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, প্রচার সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, কম্যুনিটি এ্যাক্টিভিস্ট জাকির হোসেন বাচ্চু এবং ভার্জিনিয়ার নীলাচল সার্বজনীন শারদ উৎসবের অন্যতম সংগঠক শুভ রায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত বিশ্বাস, সাংবাদিক কানু দত্ত, আদিত্য শাহীন, সুজন আহমেদ প্রমুখ। 

জ্যামাইকা থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি আনিসুর রহমান জানান, শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরে প্রতিদিনই বিপুল লোক-সমাগম ঘটে পূজা-অর্চনায়। 

ভার্জিনিয়ায় নীলাচল সর্বজনীন পূজা উৎসবে মেতেছিল নতুন প্রজন্ম

১ অক্টোবর শুরু এ দুর্গোৎসব শেষ হয় মঙ্গলবার ৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে। প্রতিদিনই অঞ্জলী, সন্ধ্যা আরতী,প্রসাদ বিতরণ, কোজাগরী লক্ষীপূজা,শ্যামা পূজার আয়োজন ছিল লক্ষনীয়। নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণে অভিভাবকের সকলেই মুগ্ধ। পূজা-অর্চনার মূল লক্ষ্য এভাবেই অর্জিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের কর্মকর্তারা। সমাপনীতে সিঁদুর দান উৎসব,শুভ বিজয়ের বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান, মিষ্টি বিতরণ ছিল উল্লেখ করার মতো। 

মন্ডপ প্রাঙ্গণে সংগীত পরিবেশনায় ছিলেন কৃষ্ণাতিথি, সবিতা রায়, রুনা রায়, জয়শ্রী রায়, অর্পণা রায়, সম্পা রায়, উইলি নন্দী, অঞ্জলী সরকার, মমতা ভৌমিক, বিথিকা কুন্ডু, মিনাক্ষী রায়,শিপ্রা রায়, অঞ্জলি সরকার, প্রিনা নন্দী,অনিন্দিতা ভট্টাচার্য, স্নেহা দেবনাথ প্রমুখ। 

এই পূজা আয়োজক সংগঠন ছিল ‘শ্রীকৃষ্ণ ভক্তসংঘ’। দুর্গোৎসবের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও কর্মসূচিগুলোর পরিচালনায় ছিলেন পূজা উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান ডা. প্রভাত চন্দ্র দাস, আহবায়ক সুভাস কুমার সাহা, যুগ্ম আহ্বায়ক ইন্দ্রজিৎ মজুমদার, পঙ্কজ রায়, সুমন মিত্র, নিতাই পাল, সঞ্জয় কর, জয়শ্রী রায়, অমরেন্দু নাথ দাস, রঞ্জিত বণিক এবং সুরঞ্জন বণিক, সমন্বয়কারি রঞ্জিত রায়। এছাড়াও ছিলেন সংগঠনের কার্যকরী পরিষদের সভাপতি অজিত চন্দ, সাধারণ সম্পাদক অর্ধেন্দু কিশোর বিশ্বাস, কোষাধ্যক্ষ রঞ্জন ভট্টাচার্য। অর্থ ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সুরেশ চন্দ্র রায়। আয়োজনের সহায়তায় আরো ছিলেন সুশীল সাহা এবং রূপকুমার ভৌমিক।  

ভার্জিনিয়া থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি জানান, হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে সবথেকে বড় উৎসব শারদীয়া। শরৎকালের মনোরম আবহাওয়ায় দেবী দুর্গার আরাধনায় মত্ত থাকেন বঙ্গ সন্তানেরা। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১ অক্টোবর শনিবার ভিয়েনায় কিলমার মিডল স্কুল মিলনয়াতনে অনুষ্ঠিত হয় ‘নীলাচল সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব। 

জ্যাকসন হাইটসে বাংলাক্লাবের পূজা উৎসবে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নেতৃবৃন্দ

ষোড়শোপচারে দেবী বোধনের মধ্যে দিয়ে যথাযথ ধর্মীয় রীতিতে পূজিত হলেন দুর্গতিনাশীনি দেবী দুর্গা। দুর্গাপূজার পোরহিত্য করেন বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির "ঢাকেশ্বরী মন্দিরের" সাবেক পুরোহিত রণজিৎ চক্রবর্তী এবং সহযোগিতায় ছিলেন সাধক চক্রবর্তী ও মিতা চক্রবর্তী। 

ঢাকের তাল, মন্ত্র উচ্চারণ, চন্ডীপাঠ, কাঁসর ঘন্টা থেকে শুরু করে শঙ্খ ধ্বনি এবং উলুধ্বনিতে মন্দির থেকে মন্ডপগুলো রীতিমতো ভক্তদের পদভাওে সরব হয়ে ওঠে সকাল থেকেই। বেলা ১২টায় দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দেন আগত ভক্তরা। দুপুর ২টায় এবং সন্ধা ৭টায় আগত হাজারো ভক্ত’র মাঝে ভোগ এবং সুস্বাদু প্রসাদ বিতরন করা হয় বলে জানান সংগঠনের সভাপতি বাবু প্রানেশ হালদার।

প্রতিবছরের ন্যায় এবছরেও দৃষ্টিনন্দন মন্ডপ ও কারুকাজে দশ প্রহরণধারিণীর বন্দনায় থিম ছিল "কুড়ে ঘরে মা রাজ রাজেশ্বরী"। বিগত দেড়মাস যাবৎ নীলাচল টিম নিরলসভাবে কাজ করেছেন শোলা ও রংয়ের কারুকাজে। এ তথ্য জানান মঞ্চ ও মন্ডপ কমিটির নিত্যানন্দ সরকার ও আকাশ সরকার। 

বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে বিকেল ৪টায় শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সমবেতসংগীত "দুর্গে দুর্গে দূর্গতিনাশিনী" পরিবেশনায় ছিল নীলাচল পূজা পরিবার। শিশু কিশোরদের মনমাতনো অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিল নুতন প্রজন্মের পুনম ও মালিশা।

ওয়াশিংটন ডি.সি'র অনতম্য পারফর্মিং আর্ট ইষ্টিটিউট "মুদ্রা"র নিবেদন " অজ্ঞলী" ছিল মনোমুগ্ধকর। স্থানীয় শিল্পী ছাড়াও ভারত থকে আগত ইন্ডিয়ান আইডল বিজয়ী " রাহুল দত্তের মন মাতানো গানে মুহুর্মুহ করতালি আর নাচে মেতে উঠেছিলেন সকলে। স্থানীয় শিল্পীর মধ্যে ছিলেন ক্লেমেন্ট গমেজ, মনোজ দাস, রোজমেরী মিতু, জুয়েল বড়োয়া, রুম্পা বড়োয়া, স্বপ্না শর্মা, হ্যাপি দেবনাথ, রিজয়া রায়, প্রিয়াঙ্কা সরকার, সিনথিয়া গমেজ প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এবং সার্বিক তত্বাবধয়ক সোমা হালদার এবং ক্লেমেন্ট গমেজ জানান, ধমীয় সম্প্রীতির বন্ধনে এবারের দুর্গোৎসবের এ আয়োজন আগের যে কোন সময়ের চেয়ে সফল হয়েছে। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি প্রানেশ হালদার এবং অপর কর্মকর্তা নিত্যানন্দ সরকার, মনোজ দাশ, সুমন দেবনাথ, পরিতোষ মৃধা, বিজন সিংহ, সনজিৎ সাহা, অখিল নাগ, বিমল রাহা, শুভ রায়, আকাশ সরকার, অলক রাহা, অমিত কর্মকার, অঙ্শুমান চক্রবর্তী, দীপংকর দেবনাথ, জীবন সরকার, রাজ বাজগেইন, উত্তম সরকার এবং বিদ্যুৎ ব্যাণার্জী ছিলেন অভ্যর্থনাসহ কর্মসূচির সার্বিক সমন্বয়ে।

সম্পর্কিত খবর

About Us

NRBC is an open news and tele video entertainment platform for non-residential Bengali network across the globe with no-business vision just to deliver news to the Bengali community.