বিনোদন

রোমে বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ ও রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তীর বর্ণিল উদযাপন

post-img

বাংলাদেশ দূতাবাস, রোমের আয়োজনে ২২ মে ২০২২ খ্রিস্টাব্দ (৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ) তারিখে দূতাবাস প্রাঙ্গণে বাংলা নববর্ষ ১৪২৯, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতের স্বাগত বক্তব্যের পরে বাংলা নববর্ষ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন, কর্ম ও দর্শনের উপর বিশেষজ্ঞ আলোচক, বিদেশি বন্ধু ও কম্যুনিটি নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে আলোচনা, দূতাবাসের-সদস্য ও শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে ছিলো মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান তাঁর স্বাগত বক্তব্যের শুরুতে বাংলা নববর্ষকে বাঙ্গালি জাতির অসাম্প্রদায়িক চেতনার উৎস এবং একান্তই আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শাশ্বত বাহক হিসেবে অনন্য এক উদ্‌যাপন হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, বাঙ্গালি জাতির নিজস্ব পঞ্জিকাবর্ষের প্রথম দিনটি নববর্ষ হিসেবে দেশের সাথে সাথে বিদেশেও বর্ণাঢ্যভাবে উদ্‌যাপিত হয়। রাষ্ট্রদূত আহসান গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলা নববর্ষকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্‌যাপনের ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙ্গালির ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে বাংলা নববর্ষের ওতপ্রোত ভূমিকা উপলব্ধি করে বাংলা নববর্ষ ভাতা প্রবর্তন করেছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগেই বাংলাদেশের রবীন্দ্র চর্চার বিকাশে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামেও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে।

রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম-কে বাঙালির জাতীয় জীবনের সাথে সর্বদা প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে তাঁদেরকে বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান দুই স্তম্ভ এবং বিশ্ব-সাহিত্যের মূল্যবান সম্পদ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ইতালিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী ভাইবোনেরাও নববর্ষ এবং রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মাঝে আবহমান বাংলার সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিবেন।

বিশেষজ্ঞ-আলোচনা পর্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রোমে অবস্থিত বিশ্বখ্যাত লা স্যাপিয়েঁজা ইউনিভার্সিটি অব রোম এর অধ্যাপক জর্জিও মিলানেত্তি । তিনি সংস্কৃতির বহমানতাকে দেশ-দেশান্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ইতালিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে বলে স্মরণ করিয়ে দেন এবং ইতালি ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে উভয় দেশের মাঝে সম্পর্কের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে বলে মত প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় প্রায় ৫০ বছর যাবত 'ঋশিল্পী' সংগঠনের সাথে কর্মরত বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী ইতালিয়ান দম্পতি মিজ গ্রাজিয়েলা মিলানো মি. ভিনসেজো ফ্যালকোন অংশগ্রহণ করেন এবং বাংলা ভাষায় তাদের আবেগ প্রকাশ করেন যা অংশগ্রহণকারীদের গভীরভাবে উদ্বেলিত করে।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দূতাবাস পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে 'এসো হে বৈশাখ এসো, এসো' গানটি পরিবেশিত হয়। দূতাবাসের ইকোনমিক কাউন্সেলর মানস মিত্র, প্রথম সচিব মো. সাইফুল ইসলাম এবং সদস্য দিপু অভি সাহার মনোমুগ্ধকর আবৃত্তি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। সবশেষে সুস্মিতা সুলতানার নির্দেশনায় ইতালিতে অবস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সুপরিচিত সাংস্কৃতিক সংগঠন 'সঞ্চারি সংগীতায়ন' এর শিশু-কিশোরদের ধারণকৃত একটি মনোজ্ঞ নৃত্য 'টাকডুম টাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল', রবীন্দ্র সংগীত 'দুই হাতে কালের মন্দিরা যে সদাই বাজে' ও নজরুল সংগীত 'শুকনো পাতার নূপুর পায়ে' পরিবেশিত হয়। এছাড়াও 'নব আনন্দে জাগো আজি নববিকিরণে' ও 'মোর ঘুম ঘোরে এলে মনোহর' গান দুইটির সাথে নৃত্য পরিবেশন করে প্রবাসী বাংলাদেশী শিশুশিল্পীরা। দিয়া, দিপা, সানজিদা, পুনম, মেঘা, তিলক, স্বপ্ন ও সানিয়ার বর্ণিল পরিবেশনা সকলের মাঝে উৎসবের আমেজ তৈরি করে।

একই সঙ্গে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে ইতালিতে বসবাসরত বাংলাদেশ কম্যুনিটির নেতারা, সাংবাদিক, ইতালিয়ান নাগরিক, দূতাবাসের সদস্যগণ ছাড়াও রোমের অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

উল্লেখ্য, কোভিড মহামারীর প্রেক্ষিতে ইতালি সরকার কর্তৃক আরোপিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শুধুমাত্র দূতাবাসের সদস্যদের উপস্থিতিতে সীমিত পরিসরে দূতাবাসে এবং অনলাইন প্লাটফর্ম জুম এ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।


সম্পর্কিত খবর

About Us

NRBC is an open news and tele video entertainment platform for non-residential Bengali network across the globe with no-business vision just to deliver news to the Bengali community.