খুলে গেলো সম্ভাবনার দুয়ার, আইজিইউ'র স্প্রিং কোয়ার্টারের ওরিয়েন্টেশন সম্পন্ন
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াস্থ আইগ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্প্রিং কোয়ার্টারে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হয়ে গেলো ৩০ মার্চ (বুধবার)। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে অংশ নেন কয়েক শ' শিক্ষার্থী। বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশের ছয় শতাধিক ছাত্রছাত্রী এখন পড়াশোনা করছেন আইগ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাদের মধ্যে নতুন সিমেস্টারে যোগ দিয়েছেন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। আগামী ৪ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ২০২২ এর স্প্রিং কোয়ার্টার। অনলাইন প্লাটফর্মে হলেও এবারের ওরিয়েন্টেশনে শিক্ষার্থীদের জন্য ছিলো নানা আয়োজন। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় র্কতৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের সামনে তুলে ধরেন আইগ্লোবালের সার্বিক চিত্র। শিক্ষার্থীদের ধারনা দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান থেকে শুরু করে নানা সুযোগ সুবিধা ও নিয়ম নীতির বিষয়ে। আইজিইউর চ্যান্সেলর বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ শিক্ষার্থীদের প্রতি লেখাপড়ায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সফলভাবে পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষার্থীরা যখন তাদের কর্মজগতে যোগ দেবে তখন তাদের সামনে খুলে যাবে অনেক বড় সম্ভাবনার দুয়ার। লক্ষ্যে পৌছাতে প্রত্যেককে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগুনোর পরামর্শ দিয়ে আবুবকর হানিপ বলেন, লেখাপড়ায় ভালো গ্রেডই তৈরি করতে পারে ভালো সম্ভাবনা। লেখাপড়ার বিষয়টিকে গুরুত্বহীন করে তুলে কেউ যদি আয় উপার্জনে ঝুঁকে পড়ে কিংবা বিকল্প কোন পথে হাঁটে তাহলে ভিসা স্ট্যাটাস হারিয়ে সমূহ বিপদের মুখে পড়তে হবে, শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে দেন চ্যান্সেলর। কয়েকটি উদাহরণ সামনে এনে আবুবকর হানিপ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অনেকে পড়াশোনাকে সঠিকভাবে গুরুত্ব না দেয়ায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাধিক ডিগ্রি নেবার পরও কোন চাকুরি জুটছে না। আর যুক্তরাষ্ট্রের আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী ওপিটি বা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ না পেলে হয় অন্য কোথাও পড়াশোনা করেত করতে হবে নয়তো দেশে ফিরে যেতে হবে। সুতরাং এখনই উপার্জনকে গুরুত্ব না দিয়ে লেখাপড়ায় মন দিলে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সফলতা এমনিতেই আসবে, বলেন তিনি। আইজিইউর কারিকুলাম একাডেমিয়া ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একটি ইকোসিস্টেম সৃষ্টি করে দক্ষ কর্মশক্তি তৈরিতেও সচেষ্ট এমনটা উল্লেখ করে চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপ বলেন, ছাত্রছাত্রীদের সুন্দর ও সফল ভবিষ্যত কথা ভেবে একটি ইউনিক শিক্ষাপদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে আইগ্লোবালে। যা সুসম্পন্ন করলে শুধু আমেরিকায় নয় বিশ্বের যে কোন প্রান্তে স্বপ্নের চাকরি পাওয়া সম্ভব হবে। আইগ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান কারাবার্ক বলেন, অন্য বিশ্ববিদ্যালয় সাথে আইগ্লোবালের পার্থক্য বেশ কয়েকটি বিষয়ে। তার মধ্যে অন্যতম হলো এটি স্কিল-বেজড একাডেমিক বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে পড়াশোনার খরচ যেমন কম তার পাশাপাশি রয়েছে কয়েক ধরনের স্কলারশিপ। এছাড়া অনলাইন, অফলাইন দুইভাবে এখানে পড়াশোনা করার সুযেগা রয়েছে। কেউ চাইলে বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে অনলাইনের মাধ্যেম আইগ্লোবাল থেকে পরিপূর্ণ ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন। নতুন কোয়ার্টারে অনেক শিক্ষার্থী পরিবার পরিজন ছেড়ে বিদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো পড়তে এসেছে। নতুন জায়গা নতুন পরিবেশ অনেকের মানিয়ে নিতে কষ্ট হবে, কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে, পরিবারকে মিস করবে, একেবারে নতুন সাবজেক্ট হওয়ায় বুঝতে কঠিন হবে, বিষয়গুলো আমাদের ভাবনায় রয়েছে, বলেন ড. হাসান কারাবার্ক। এমন কোন পরিস্থিতিতে পড়লে ছাত্রছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি। এবং বলেন, শিক্ষার্থীদের যে কোনো সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় পাশে থাকবে । আইজিইউ প্রেসিডেন্ট আরও জানান, কারিকুলামে বেশ কিছু স্কিল ডেভোলপিং প্রোগ্রাম রয়েছে। যার জন্য নতুন আইটি ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থী হাতে কলমে দক্ষতাগুলো শিখে নিতে পারবে। এখানে সম্ভাবনা অপরিসীম তবে তার জন্য প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হবে এবং অধ্যাবসায়ী হতে হবে, বলেন আইজিইউ প্রেসিডেন্ট। আইগ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ফারহানা হানিপ ছাত্রছাত্রীদের যে কোন সমস্যার কথা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এখানে পড়তে আসার পর অনেকে অনেকরকম পরামর্শ দিবে। তার মধ্যে ভালো মন্দ অনেক কিছুই থাকবে। এসব শুনে নতুন শিক্ষার্থীরা মিসগাইডেড হয়। ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। তাই তারা যেনো যে কোনো পরামর্শের জন্য সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরণাপন্ন হন, বলেন সিএফও। ওরিয়েন্টেশন কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক রীতিপদ্ধতির উপর আলোচনা হয়। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব এজেন্ডাগুলো সামনে নিয়ে আসেন আইজিইউর স্কুল অব বিজনেস এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মার্ক এল রবিনসন। আইগ্লোবাল কোন লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টে ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে পাশে থাকবে সেসব বিষয়ে আলোকপাত করেন তিনি। এ পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কলারশিপের সুযোগের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন অধ্যাপক মার্ক। স্কুল অব আইটি'র পরিচালক ড. অ্যাপোসটোলস এলিয়োপলস শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের সফলতার দ্বারে পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। তার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি। শিক্ষার্থীদের সামনে তাদের পড়াশোনার নানা ধরন পরীক্ষার মান বন্টনের বিষয়গুলো বিস্তারিত তুলে ধরেন ড. অ্যাপোসটোলস। অনলাইন ও অফলাইন ক্লাসগুলো কখন কিভাবে অংশ নিতে হবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি। ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. জাফর পিরিম আইগ্লেবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার নিয়ম, প্লাজারিজম এর ব্যাপারে কঠোরতার দিকগুলো উপস্থাপন করেন। এডমিশন ম্যানেজার সারাহ হেদায়েত স্টুডেন্ট ভিসায় আসার পর একজন শিক্ষার্থীকে যে সব নিয়ম মানতে হয় সে বিষয়ে সম্যক ধারনা দেন। ভর্তি পদ্ধতি, বিষয় পরিবর্তন, লাইব্রেরি ও আইটি ল্যাবের ব্যবহার সম্পর্কে কথা বলেন তিনি। এ সময় শিক্ষার্থীদের কাজের ক্ষেত্রে বিধি অনুযায়ী যে ওপিটি ও সিপিটি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে সে বিষয়েও বিস্তারিত তুলে ধরেন সারাহ হেদায়াত। এই আয়োজনে আরও বক্তব্য রাখেন আইগ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট গভর্নমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সেলিন ইয়েগিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই কোয়ার্টার কমপ্লিট করা ছাত্রী অমুওনমি সেকিরাত নিজের অভিজ্ঞতা অরিয়েন্টেশনে শেয়ার করে নানা পরামর্শ রাখেন। অরিয়েন্টেশনের শেষ পর্বে ছিলো প্রশ্নোত্তর পর্ব। সেখানে নবাগত ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন প্রশ্ন রাখেন। তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ও কর্মকর্তারা। করোনার কারণে আইগ্লোবালের ক্লাসগুলো হাইব্রিড পদ্ধতিতে চলবে। ক্লাসসমূহের কিছু কিছু অফলাইনে এবং অধিকাংশই অনলাইনে সম্পন্ন হবে। কোয়ার্টারের ৬ষ্ঠ এবং নবম সপ্তাহের ক্লাসগুলোতে শিক্ষার্থীরা সশরিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে অংশ নিতে পারবে বলে অরিয়েন্টেশনে জানানো হয়।