এখানে বাড়িগুলো ছিলো ভুতের দখলে। বাড়ির আঙিনা, দরজাপাট, দেয়াল সবখানে ভুতের বিস্তার। আঙিনার গাছে ভুত-ভুতুনিরা হল্লায় মেতেছিলো। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দেখা গেলো, কেউ হয়তো ব্যালকনিতে দোলনা পেতে দোল খাচ্ছে। কেউ সেঁটে আছে দেয়ালে।
শুধুই কি মানুষ ভুত। আছে কুকুর ভুতও। মরেছে কোনকালে কে জানে? এখন দেখা যাচ্ছে বাড়ির আঙিনায় কংকাল দেহে ফিরে এসেছে ভুত কুকুর হয়ে।
কোনো কোনো বাড়ির আঙিনাই হয়ে উঠেছিলো গ্রেভইয়ার্ড। সেখানে এপিটাফ গুলোয় লেখা প্রয়াতদের নাম। দেখা গেলো কালো বেড়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই গ্রেভইয়ার্ডে। আর একধারে গাছের ডালে নিজেকে পেঁচিয়ে মরে পড়ে আছে দাঁতাল ভালুক।
একজনকে দেখা গেলো বাড়ির আরেক ভুতের পরিচর্যায় ব্যস্ত। সেই ভুত স্থান করে নেয় ঘরের চালে। আকর্ণ বিস্তৃত তার হা করে মস্তকে শিংওয়ালা সেই দাতাল দানবের গায়ে মাখানো হচ্ছিলো লাল রঙ।
এক বাড়িতে দেখা গেলো ভুত-ভুতনির পাশাপাশি বড় বড় মাকরসা জাল বিস্তার করে বাড়িগুলোকে পোড়ো বাড়িতে পরিণত করেছে। গাছের ডালে ডালে ঝুলছে ভুতের কংকাল।
হুডি পড়া বৃহৎ এক কংকাল হাসছে দাতাল হাসি। তার ভয়াল নখরগুলো ছড়াচ্ছে ভীষণ ভয়।
এটাই হ্যালোইন। পশ্চিমা বিশ্বের অগ্রসরতার পাশে এক ভীষণ প্রাচীণ কু-সংস্কার।
শুধু কি সাজানো ভুত? অনেক তরুণ-তরুণী ছেলে বুড়োও সাজে এই ভুত ভুতনীর সাজে। আর ঘুড়ে বেড়ায় সাবওয়ে স্টেশনগুলোতে। কেউ কেউ নেয় রক্তখেকো ভয়ঙ্কর রূপ। যেনো কারো রক্ত চুষে নিয়েছে আর তাতে রক্তাক্ত হয়েছে তার গায়ের সফেদ পোশাক।
কেউ আবার ওরা মুখে সাদা রঙ মেখে ঘুরে বেড়ায় দিন ভর। যোগ দেয় ভুত-প্রেতের মিছিলে। এরা সব ভুত-ভুতনী-ডাইনি-পিশাচের দল।
এভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সড়কগুলোও ভুত-প্রেতের দখলে চলে যায়। বিশেষ করে সন্ধ্যা যখন নেমে আসে তার আগেই এরা নেমে আসে শহরে। কেউ বড় ভূত, কেউ ছোট ভূত, কেউ বুড়ো ভূত, কেউ কুঁজো ভূত, কেউ লাঠির মতো সটান ভূত। কেউ আবার রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার। মুখের দুই দিক দিয়ে রক্ত বেয়ে নামছে। কারো দাঁত দুপাটি আকর্ণ বিস্তৃত। কারও মুখের হা নাসিকার উপর থেকে থুতনির নিচ পর্যন্ত ছড়িয়ে। এখানেই শেষ নয়, কেউ সাজে ডাইনোসর কেউ বা গডজিলা। কেউ অতিকায় ভয়ঙ্কর আরও কোনও প্রাণী। সবমিলিয়ে ভূত-প্রেতের আনাগোনায় ভীতির জনপদ হয়ে ওঠে নগর-নগরী।
মূলত হ্যালোস' ইভনি- অর্থাৎ ভূত প্রেতের সন্ধ্যা এটাই হ্যালোইনের মূল কথা।
প্রতিবছর ৩১ অক্টোবর দিনটি উদযাপন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রই কেবল নয় আরও কিছু দেশের নগরে নগরে এই সন্ধ্যাটি হয়ে ওঠে ভূত-প্রেতদের।
এটি একটি বার্ষিক উদযাপন। মূলত শিশুদের উদযাপন। শিশুরাই সাজে এইসব ভূত-প্রেতের সাজ।
বড়রাও অবশ্য কম যায় না। তারাও সাজে শিশুদের সাথে পাল্লা দিয়ে।
প্রাচীন কেলটিক ফেসটিভাল থেকেই এই উৎসবের জন্ম।
প্রায় দুই হাজার বছর আগে বর্তমান আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও উত্তর ফ্রান্সে ছিলো এই কেলটিক জাতির বাস। অক্টোবরের শেষ দিনের সন্ধ্যাটিকে তারা মনে করতো সবচেয়ে খারাপ সময়। এ সময় সব প্রেতাত্মা ও অতৃপ্ত আত্মা ধরাধামে নেমে আসে। এই ভূত-প্রেতরা মানুষের ক্ষতি করতে পারে। সে কারণে তাদের হটিয়ে দিতে মানুষরা নিজেরই নানা রকম ভূতের মুখোশ ও ভূতের কাপড় পরে থাকতো। পরে ধীরে ধীরে বিষয়টি উৎসবে পরিণত হয়।
এই দিন সকাল থেকেই ছোট ছোট শিশুরা হ্যালোইনের কস্টিউম পরে নানা ধরনের ভূত-প্রেত সেজে ঘুরতে থাকে। আর ঘরে ঘরে, দোকান-পাটে গিয়ে হানা দেয়।
বলে ট্রিক অর ট্রিট। হয় আমাকে কৌশলে ধরো নয়তো খেতে দাও। এসময় শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ক্যান্ডি। দিনভর ঘুরে ঘুরে ক্যান্ডি তুলে ঝুড়ি ভরে ফেলে শিশুরা। আর সন্ধ্যায় তারা নামে ভূত-প্রেতাত্মার মিছিলে।
ইউরোপ-আমেরিকা ছাড়াও দিনটি উদযাপিত হয় জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে।
একটি তথ্য বলছে, দিনটি এমনকি ঘটা করে পালন করে জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)ও। এদিন ভূত সেজে ট্রিক অর ট্রিট করে যে ক্যান্ডি তোলে শিশুরা সেগুলো পরে বিতরণ করা হয় অসহায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে।
তবে এদিন আসলে মজা করে ক্যান্ডি খাওয়ার দিন। এই দিন নেই বাবা-মায়ের মানা। ফলে হ্যালোইনের মিছিলে শিশুদের দেখা গেলো ক্যান্ডি চিবুচ্ছে আর ভয় দেখিয়ে বেড়াচ্ছে। এক সময় কু-সংস্কার থেকে করা হলেও এখন হ্যালোইন স্রেফ এক উৎসব।
যে উৎসব হয়ে গেলো ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতেও। হ্যালোইনের দিনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সাজানো হয়েছিলো ডাইনি-পিশাচ আর মাকরসার জালে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপ, প্রেসিডেন্ট ড. হাসান কারাবার্ক, সিএফও ফারহানা হানিপ এতে অংশ নেন। চলে মমি সাজানোর প্রতিযোগিতা।
এছাড়াও শিক্ষার্থীরা সেজে ছিলো ভূত-প্রেতের সাজে। সেরা সাজের পুরস্কার পায় কিনানা। তাকে পুরস্কার তুলে দেয়ার পর চলে পিজা উৎসব। সকলে মজা করে পিজা খেয়ে হ্যালোইন উৎসব শেষ করে।