যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসে একটি সংবর্ধনা সভায় যোগ দিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, প্রতিদ্বন্ধীতাপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠিত হলেই তা হবে গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা। বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন সকলের কাছেই চোখে পড়ার মতো, এবং দেশের প্রতিটি মানুষের মানবাধিকার সুরক্ষাকে সরকার সবচেয়ে গুরুত্বের সাথে দেখছে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
গত সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) নিউইয়র্কের গুলশান টেরাসে এখানকার বৃহত্তর লাকসাম ফাউন্ডেশন ইউএসএ-র পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশি আমেরিকান আইটি উদ্যোক্তা আইগ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর প্রকৌশলী আবুবকর হানিপ।
মন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, "শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন আর সরকার মিলে সুষ্ঠ একটি র্নিবাচন দেয়া সম্ভব নয়। তার জন্য নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।"
একটি প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলে সেটি হবে গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা, এমনটাই মত দেন মন্ত্রী।
সকলের কাছে গঠণমূলক সমালোচনার আহ্বান জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকারের যে কোন ভুল নেই তা নয়, তার জন্য গঠনমূলক সমালোচনা অবশ্যই প্রয়োজন আছে। তবে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে শুধূ বিতর্ক করলে তাতে দেশ এগুতে পারবে না বরং পিছিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বিতর্ক করলে দেশেরই ক্ষতি হবে। আমরা জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করতেই পারবো। তার বেশি কিছু নয়।
শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকলে সরকারের ভুলত্রুটি ধরা যাবে না, এমন মত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরলে দেখা যাবে অসংখ্য অর্জন সরকারের রয়েছে। কিন্ত তাই বলে কি ব্যর্থতা নেই? সমালোচকরাই সে ভুল আমাদের ধরিয়ে দিতে পারবেন।
মানবাধিকারের কথা বলা হয়। আমাদের কিছু সমস্যা রয়েছে সে কথা স্বীকার করে নিয়েই বলছি, এ সমস্যাগুলো সমাধানের কাজ চলছে এবং একটি সময়ের ব্যবধানে তা কেটে যাবে এবং বাংলাদেশ মানবাধিকারের প্রেক্ষাপটে উত্তরোত্তর উন্নতি করবে।
গণতন্ত্র বিশ্বের দেশে দেশে ভিন্নভাবে চর্চিত হয়, এমন মত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে আড়াই শ' বছরের, ব্রিটেনের পাঁচশ' বছরের পুরোনো ইতিহাস রয়েছে, তার তুলনায় ৫০ বছরের বাংলাদেশ, যার একুশ বছরই কেটেছে সামরিক শাসনের অধীনে আর সে কারণে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চাকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের গণতন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না।
তিনি বলেন, এই যুক্তরাষ্ট্রে কৃতদাস প্রথার বিলুপ্তির সিদ্ধান্তে যুদ্ধ হয়, হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দেয়, আর তারই ধারাবাহিকতায় প্রাণ দিতে হয় প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনকেও। সেই তুলনায় বাংলাদেশ তার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পথে খুব বেশি পিছিয়ে নেই বলেও মত দেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সময়ের ব্যবধানেই সকল কিছু প্রতিষ্ঠিত হবে। পৃথিবীর বুকে একটি সম্মানিত জাতি হিসেবেই টিকে থাকবে বাংলাদেশ।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ তার সঠিক পথেই এগিয়ে চলেছে।
বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে। দেশের মানুষের আর্থিক সক্ষমতা অনেক বেড়েছে বলেও তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন এলজিআরডি মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ভার্জিনিয়াস্থ আইগ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও পিপল এন টেকের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ বলেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাতরত প্রতিষ্ঠিত যে সব বাংলাদেশি রয়েছেন তারা অনেকেই এখন এদেশের মূলধারায় সংযুক্ত হয়ে এদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারছেন।
তিনি বলেন, আমরা যদি নিজেদের জায়গা থেকে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেই, তাহলে দেশের নাম উজ্জ্বল করার মত অনেক সুযোগ তৈরি হবে।
আইগ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশিদের বৃত্তি নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে এমনটা্ উল্লেখ করে আবুবকর হানিপ বলেন, এর মধ্য দিয়ে দেশের শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও এগিয়ে যেতে পারবে। তারা দক্ষতা-ভিত্তিক শিক্ষা নিয়ে এখানকার মূলধারায় যুক্ত হয়ে কাজ করার সুযোগ পাবে।
বিশ্বের বড় বড় আইটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ে একসময়ে বাংলাদেশিদের দেখা যাবে, এমন প্রত্যাশার কথাই জানান আবুবকর হানিপ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বৃহত্তর লাকসাম ফাউন্ডেশন ইউএসএর’র সভাপতি মশিউর রহমান মজুমদার। ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ইউছূফ মজুমদার। লাকসামকে জেলা হিসেবে ঘোষণার উদ্যোগ নিতে মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান মশিউর রহমান।
