২০২৪ সালের একুশে পদক পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ২১ বিভাগে ২১ বিশিষ্টজন এবার এই পুরস্কার পাচ্ছেন। রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক এই সম্মাননা পেয়েছেন দই বিক্রেতা জিয়াউল হক জিয়া। সমাজ সেবাই বিশেষ অবদানের জন্য তাকে এ পদক দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সংস্কৃতবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি নিশ্চিত করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাটের বটতলা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জিয়াউল হক জিয়া ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন জন্মগ্রহণ করেন। অর্থের অভাবে ১৯৫৫ সালে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর আর পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি। তার বাবা ছিলেন একজন গোয়ালা। বাবার পরামর্শে তিনি দই বিক্রির কাজ শুরু করেন।
অর্থের অভাবে যেন তার মতো আর কারও পড়াশোনা বন্ধ না হয়, সেজন্য দরিদ্র শিখশার্থীদের তিনি সহায়তা করছেন। দই বিক্রির লাভের টাকার অংশ বিশেষ জমিয়ে বই কিনে পড়তে দিতেন। এভাবেই তিনি এলাকার দরিদ্র ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান। একজনের বই পড়া শেষ হলে বই নিয়ে গিয়ে দিতেন আরেকজনকে পড়তে। দিনে দিনে তার ঘরে বইয়ের সংগ্রহ বাড়তে থাকে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন পাঠাগার।
বর্তমানে পাঠাগারের বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। সরকার বিনামূল্যে স্কুল পর্যায়ে বই বিতরণ শুরু করলে তিনি কলেজ শিক্ষার্থীদের বই কিনে দিতেন এবং পড়াশোনার খরচে অর্থ সহায়তা শুরু করেন। তার এই উদ্যোগ সফল করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বিত্তবানসহ প্রবাসীরা তাকে অর্থসহায়তা করেন।
তাদের অনুদান ও নিজের আয় থেকে শিক্ষা সহায়তার পাশাপাশি এলাকার দরিদ্র মানুষদের গৃহ নির্মাণ, নলকূপ স্থাপন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থদান ও ঈদ উপলক্ষে নতুন জামা কাপড় দিয়ে সমাজসেবায় রেখেছেন অনন্য অবদান।
একুশে পদকের মনোনয়ন ঘোষণার পরের দিনেও দই বিক্রি করতে যান বাড়ি থেকে ১০ কিমি দূরে রহনপুর বাজারে।
তার এই পদক প্রাপ্তিতে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় পীরগাছা দারুস সুন্নাত দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মজিবুর রহমান জানান, আমি তার দেওয়া বই পড়ে শিক্ষক হতে পেরেছি। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ, তার দীর্ঘায়ু কামনা করি।
মুশরীভুজা ইউসুফ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজগার আলী বলেন, তার কলেজের অনেক দরিদ্র ছাত্রছাত্রী জিয়াউল হক জিয়ার কিনে দেওয়া বই ও অর্থ সহায়তায় পড়াশোনা করছে। এমনকি তার সহায়তায় পড়াশোনা করা দুজন ছাত্র এখন এই কলেজের শিক্ষক হয়ে আছেন।
ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেন অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, জিয়াউল হক আমাদের গর্ব। তাকে একুশে পদক দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
জিয়াউল হকের স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪৫) জানান, আমার স্বামী একুশে পদক পেয়েছে শুনে আমি অনেক আনন্দিত। খুব খুশি হয়েছি। আমি ধন্য এমন স্বামী পেয়েছি। আমার কপাল ভালো এমন স্বামী পেয়েছি।
জিয়াউল হকের ছেলে মহব্বত হক (১৮) বলেন, সমাজসেবা ক্যাটাগরিতে একুশে পদকের জন্য আমার বাবাকে মনোনীত করার জন্য আমি অনেক আনন্দিত।
একুশে পদকে মনোনীত হওয়ার অনুভূতি জানিয়ে জিয়াউল হক জিয়া বলেন, আমি কোনোদিন ভাবতে পারিনি যে, আমাকে একুশে পদকের জন্য মনোনীত করা হবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত।