আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নিউইয়র্কে প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের একটি প্রত্যাশার পূরণ হলো। নগরের জ্যামাইকায় একটি সড়কের নামকরণ করা হলো ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’।
সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শত শত প্রবাসী বাংলাদেশির জয়-বাংলা স্লোগান আর বিপুল করতালির মধ্যে এই আনুষ্ঠানিক নামকরণ হয়। হিলসাইড এভিনিউ এবং হোমলোন স্ট্রিটের কর্ণারে ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’র এই নামফলক উন্মোচন করেন সিটি কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জিনারো।
হোমলোন কর্নার থেকে হিলসাইড এভিনিউ ধরে অন্তত দুই ব্লক পর্যন্ত এই নামে পরিচিত হবে।
নিউইয়র্ক সিটিতে তিন লাখের বেশি বাংলাদেশির বসবাস। যার বড় অংশ থাকেন জ্যামাইকার হিলসাইডে।
সম্প্রতি সিটি কাউন্সিলে সর্বসম্মতভাবে এই বিলটি পাশ হয়। যার বাস্তবায়ন ঘটলো একুশে ফেব্রুয়ারিতে। এর মধ্য দিয়ে সুদুর আমেরিকায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হলো, বলছিলেন জ্যামাইকাবাসী।
ব্যস্ততম হিলসাইড এভিনিউর এই অংশটুকুর পুনর্নামকরণের ফলক উম্মোচনের দিনটিকে ২১ ফেব্রুয়ারিতে বেছে নেয়া প্রসঙ্গে কাউন্সিলম্যান জেমস জিনারো বলেন, বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য বাঙালি তরুণেরা জীবন দিয়েছেন। সেই আন্দোলনের পথ বেয়ে একাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে বাঙালিরা স্বাধীনতা অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এ পরিণত করেছে জাতিসংঘ। এমন একটি ঐতিহাসিক-স্মরণীয় দিনে ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’র উদ্বোধন হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা আরো উৎফুল্ল হলেন।
কাউন্সিলম্যানকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বহুজাতিক এই সমাজে বাঙালিদের মেধা আর শ্রমের মূল্যায়ন নানাভাবে ঘটছে। রাস্তার নামকরণে তা আরো ভিন্নভাবে দৃশ্যমান হলো। আমি আশা করছি, প্রিয় মাতৃভূমির চলমান উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির স্বার্থে প্রবাসীরাও ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।'
এ অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজনের নামোল্লেখ করে কাউন্সিলম্যান জিনারো ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সীমাবদ্ধতার কারণে হয়তো সকলের নাম উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি তবে শিগগিরই তাদের একটি সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করা হবে। যাতে উল্লেখ থাকবে যারা এই রাস্তার নামকরণে নানাভাবে সহায়তা করেছেন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন স্টেট এ্যাসেম্বলিওম্যান জেনিফার রাজকুমার, ডেভিড ওয়েপ্রিন, কুইন্স কাউন্টি ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার এ্যাট লার্জ এটর্নি মঈন চৌধুরী, ডেমক্র্যাট মোহাম্মদ আমিনুল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার সাদেক প্রমুখ।
এক পর্যায়ে জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির পক্ষ থেকে ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, মোহাম্মদ আলিমসহ কয়েকজন কাউন্সিলম্যানকে কমিউনিটির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতাসূচক ক্রেস্ট দেওয়া হয়। শেষে শ্রী চিন্ময় সেন্টারের শিল্পীরা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীতের পর মহান একুশের অবিস্মরণীয় সেই ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি-আমি কী ভুলিতে পারি’ গানটি পরিবেশ করেন।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটিতে এই প্রথম ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’ নামক নিজস্ব একটি জায়গা তৈরি হলো। উদ্বোধনী সমাবেশের সূচনালগ্নে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছু সময় নিরবতা পালন করা হয়।
