মানবজাতির কল্যাণে সকল যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহারের আহ্বান শেখ হাসিনার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে ১৭ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা ৪২ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পৌঁছান। ১৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সাধারণ অধিবেশন শুরু হলেও মূল অধিবেশন শুরু হয় ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে। ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে সপ্তদশ বারের মতো ইউএনজিএ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অন্যান্য বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিষয় তুলে ধরেন।এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও সাইড ইভেন্টে অংশ নেন। ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ‘তারা কি আমাদের ভুলে গেছে?’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে চারটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব বাস্তবায়নের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান তিনি। একই দিনে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশে আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। এ ছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠককালে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে নানা অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়ন এবং ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য জাতিসংঘের কাছে পাঁচটি প্রস্তাব করেন তিনি। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সততার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।সেইসঙ্গে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রতিনিধি ডাইনিং রুমে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডারদের বার্ষিক সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি জাতিসংঘে নারী মহাসচিব নিয়োগের মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা আনার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা দুঃখজনক যে, জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সময় এসেছে, আমরা শিগগিরই একজনকে পাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করে মানবজাতির কল্যাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সকলকে একযোগে কাজ করার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। ২০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।প্রথম সাত দিন হয়েছে উচ্চপর্যায়ের বক্তৃতা, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৩টি দেশের নেতারা এতে অংশগ্রহণ করেন। মূল অধিবেশনে ভাষণের বাইরে আরও অনেক বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। যদিও এই সম্মেলনে জাতিসংঘের ৫টি প্রভাবশালী রাষ্ট্রের মধ্যে ৩টি দেশই অনুপস্থিত ছিল। সবার আগ্রহ ছিলো দেড় বছরের বেশি সময় ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসান নিয়ে এবারে ৭৮ তম জাতিসংঘ অধিবেশনে কী আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়। যুদ্ধের এমন পরিস্থিতিতে এবার সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে উপস্থিত হয়ে জেলেনস্কি আবারও বিশ্বকে পাশে চাইলেন। বেশ কিছূ গুরুত্বপূর্ন বৈঠক ও কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দশ দিনব্যাপী জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার ২৬ সেপ্টেম্বর। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে চলে আসেন ২৩ সেপ্টেম্বর। তার আগে নিউইয়র্কে এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির ভাষণে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন ডিসি ত্যাগ করবেন এবং ৩ অক্টোবর পর্যন্ত লন্ডনে অবস্থান করবেন। ৪ অক্টোবর ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
