প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২২ , ০২:৪৩ | ভার্জিনিয়া নিউজরুম (এমএমকে)
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের এএসএ কলেজের (আসা কলেজ নামে বেশি পরিচিত) অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল করা হয়েছে। অ্যাক্রেডিটর মিডল স্টেটস কমিশন অন হায়ার এডুকেশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে এখানকার সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে।
অ্যাডভান্সড সফটওয়্যার অ্যানালিসিস- এএসএ ১৯৮৫ সালে ম্যানহাটনে একটি ছোট্ট ক্লাসরুমে যাত্রা শুরু করে পরে বৃহৎ কলেজে রূপ নিলেও ব্যবসাভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের অ্যাক্রেডিটেশন ধরে রাখতে ব্যর্থ হলো।
অ্যাক্রেডিটর কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজটি এখন থেকে ফেডারেল স্টুডেন্ট এইডের সুবিধা পাবেনা। অথচ এই শিক্ষার্থীদের ভর্তি থেকে প্রতিষ্ঠানটির মোট রেভিনিউর দুই-তৃতীয়াংশ আসতো বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ১১ নভেম্বর মিডল স্টেটের পাঠানো একটি চিঠিতে আসা কলেজকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ বলেছে, শর্তগুলো না মানতে পারলে আগামী ১ মার্চ ২০২৩ এর পর অ্যাক্রেডিটেশন আর থাকবে না।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটন ও ব্রুকলিনে আসা কলেজের দুটি ক্যাম্পাস রয়েছে। এছাড়া ফ্লোরিডার হিয়ালিতেও রয়েছে একটি ক্যাম্পাস। প্রতিষ্ঠানটি নার্সিং, হেলথ কেয়ার, ইনফরমেশন টেকনোলজি, বিজনেস ও ক্রিমানাল জাস্টিসে ডিগ্রি অফার করে আসছে। সূত্রের বরাতে খবরে বলা হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ৫২ মিলিয়ন ডলার রেভিনিউ আয় করেছে যার মধ্যে ৩৩.৬ মিলিয়ন ডলারই ছিলো যুক্তরাষ্ট্রে ট্যাক্সপেয়ারদের অর্থ। যা স্টুডেন্ট গ্র্যান্ট ও লোনের মাধ্যমেই আসতো।
সরকারের এই বিপুল অংকের অর্থ পাওয়ার পরেও আসা'য় নিয়ম নীতির বালাই ছিলো না। মুনাফালোভী প্রতিষ্ঠানটি মনকাড়া বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী সংগ্রহে ও অর্থ আয়ে ব্যস্ত ছিলো। নিউইয়র্কের সাবওয়েগুলোতে এমন বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের জন্য নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ এবছর ১ লাখ ১২ হাজার ডলার জরিমানা করে এই প্রতিষ্ঠানকে।
নিউইয়র্ক লিগ্যাল এসিস্ট্যান্স গ্রুপ তথা সাবওয়েতে ওঠা সাধারণ মানুষও এ বিষয়ে অভিযোগ আনে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আসা কলেজ তার বিজ্ঞাপন তুলে নিতে বাধ্য হয়। এবং জরিমানা দেয়।
মিডল স্টেটস অ্যাক্রেডিটর কমিশন বলেছে, আসা তার শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের কাছে কোনো কার্যকর টিচ-আউট প্ল্যানও নেই।
কমিশনের তরফ থেকে আরও বলা হয়েছে, ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন আসা কলেজকে তার পে-রোল বাধ্যবাধকতা মানতে ব্যর্থ হওয়ার কারলে এইচসিএম২ স্ট্যাটাস বাতিল করেছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি তার বন্দোবস্ত চুক্তির শর্তগুলো মানতে পারেনি।
আরও খবর হচ্ছে, কমিশনকে না জানিয়ে কলেজটির ফ্লোরিডার ক্যাম্পাস এরই মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুর্ব অনুমোদন ছাড়া এভাবে ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়া ও স্টেট কর্তৃপক্ষ থেকে লাইসেন্স নবায়ন না করাটিও অন্যায় বলে জানিয়েছে মিডল স্টেট।
স্থানীয় সরকার এজেন্সিগুলোর তরফ থেকেও মিডল স্টেটের কাছে কলেজটির বিরুদ্ধে কনজুমার প্রোটেকশন আইনগুলো না মানার অভিযোগ এসেছে।
এ অবস্থায় মিডল স্টেটস এরই মধ্যে আসা কলেজকে যথাযথ টিচ-আউট প্ল্যান দাখিল করতে বলেছে এবং তাদের অ্যাক্রেডিটেশন যে বাতিল করা হয়েছে তা সকল শিক্ষার্থীকে যথাযথভাবে জানিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়াও নতুন কোনো শিক্ষার্থী যাতে এই কলেজে আর ভর্তি করা না হয় সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
আরও গুরুতর বিষয় হচ্ছে এই কলেজের মালিক অ্যালেক্স শেগলের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ। যে কারণে তিন বছর আগে কলেজ বোর্ড তাকে সরিয়ে দেয়। এরপর গেলো বছর শেগল নিজেই স্কুল বোর্ড সদস্যদের অধিকাংশকে সরিয়ে দেন এবং ফের এর নিয়ন্ত্রণ নেন। গত ডিসেম্বর থেকে তিনি স্কুলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আর নেই। তবে স্কুলের সত্ত্বাধিকারী হিসেবে রয়ে গেছেন।
তবে, অবাক করার বিষয় হচ্ছে, বিষয়গুলো বেমালুম চেপে যাচ্ছে আসা কর্তৃপক্ষ। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আসা কলেজের ওয়েবসাইটে এই অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল বিষয়ক কোনো তথ্যই দেওয়া হয়নি। বরং এতে এখনো ঝুলে রয়েছে অনেকগুলো নজরকাড়া ভর্তির বিজ্ঞাপন।