এনআরবি বিশ্ব

কুয়েতে ভিসা জটিলতায় প্রতিনিয়ত বিপাকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা

post-img

মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার কুয়েত। দেশটিতে কাজের ধরন অনুযায়ী ভিসার ধরনেও রয়েছে ভিন্নতা ও আলাদা নিয়ম-কানুন। অথচ এসব বিষয়ে না জেনে দালালের খপ্পরে পড়ে কুয়েতে আসার পর বিপাকে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের।

কুয়েতে অন্য দেশ থেকে ২০ নম্বর খাদেম (গৃহকর্মী) এবং ১৮ নম্বর (শোন কোম্পানি) দুই ধরনের ভিসায় শ্রমিকরা আসে। খাদেম ভিসার মধ্যে রয়েছে ড্রাইভার, বাবুর্চি ও গৃহকর্মের সহযোগী এই তিন ধরনের ভিসা। এসব শ্রমিক মালিকের অনুমতি নিয়ে অন্য বাসায় কিছু সময় কাজ করতে পারে। এছাড়া অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও অন্য কোথাও ভালো সুযোগ-সুবিধা পেলে ভিসা পরিবর্তনে সুযোগ পান না খাদেম আকামাধারীরা।

শোন ভিসা কয়েক ধরনের রয়েছে, এগুলোর মধ্যে মাজরা শোন ভিসা (বাগানের কৃষি কাজ), রায় গানাম শোন ভিসা (খামারের পশু-পাখি দেখাশোনা করা), মাসনা শোন ভিসা (বিভিন্ন ধরণের পণ্য উৎপাদনকারী কারখানার কাজ) রয়েছে। এছাড়া মাসুরা সাগীরা (ছোট কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান), আখুদ হুকুমা ভিসা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দেওয়া হয়। কোম্পানি লাইসেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে আসে দেশটির বিভিন্ন অফিস, আদালত, শপিং মহল, রাস্তাঘাট, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে। সাধারণত আট ঘণ্টা ডিউটিতে ৭৫ দিনার বেতন, খাওয়া নিজের, থাকা মালিকের এমনটিই নিয়ম।

এই কয়েক ধরনের ভিসায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা এসে থাকেন। এসব ভিসায় আসা শ্রমিকরা কোম্পানির অনুমতি নিয়ে একই ভিসায় একই ধরনের অন্য আরেকটি কোম্পানিতে আকাম পরিবর্তন করতে পারেন। ভিন্ন ধরনের ভিন্ন কোম্পানিতে ভালো সুযোগ-সুবিধা থাকলেও ভিসা পরিবর্তন করা সুযোগ নেই। তবে ১৮ নম্বর শোন ভিসার মধ্যে আহালি নামে এক ধরনের ভিসা রয়েছে, এই ভিসায় আসা শ্রমিকরা নিজের পছন্দ মতো কাজ ও কোম্পানিতে আকামা পরিবর্তন করতে পারেন। ভিসাগুলো কয়েক হাত ঘুরে আসার ফলে বাংলাদেশিদের ভিসার মূল্য দিতে হয় ৬ লাখ টাকা থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত। একই ভিসায় ভারত ও নেপালের শ্রমিকদের আসতে খরচ ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে দেশটিতে ২ লাখ ৫০ হাজারের মতো বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে।

শোন ভিসা নিয়ে দেশটিতে সাত বছর আগে আসা চট্টগ্রামের শাহজাহান বলেন, আমি মোবাইল মেরামতের কাজ জানি। দোকান বিক্রি করে দালালের মাধ্যমে ৮ লাখ টাকা দিয়ে ভিসা কিনি। দালাল বলেছিল আহালি ভিসা যেকোনো জায়গায় আকামা পরিবর্তন করতে পারব। আসার পরে দেখে ক্লিনিং কোম্পানিতে কাজ। এই কাজ ছাড়া অন্য কোম্পানিতে ভিসা পরিবর্তনে সুযোগ নেই। কোম্পানির ডিউটি শেষে একটি মোবাইল দোকানে পার্ট টাইম কাজ করি। আমার মতো অনেকেই করছে, যেটা স্থানীয় আইনে অবৈধ। চেকে ধরা পড়লে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

কুয়েত প্রবাসী সমাজকর্মী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি এক ল’ ফার্মে কাজ করা সুবাদে দেখেছি গত কয়েক বছরে দেশ থেকে অনেক শিক্ষিত বিভিন্ন কাজে দক্ষ তরুণরা শুধু ভিসা পরিবর্তন করার সুযোগ না থাকার কারণে তাদের দক্ষতা কাজে লাগাতে পারছেন না। যার ফলে অনেককেই দেখা যায় কোম্পানিতে ডবল ডিউটি করতে হচ্ছে, কিন্তু সেই পরিমাণ বেতন পাচ্ছে না। কেউ আবার দক্ষতা অনুযায়ী অন্য জায়গায় পার্ট টাইম কাজ করেন, যেটা স্থানীয় আইনে অবৈধ। নানামুখী ছাপে প্রবাসীরা হতাশায় ভুগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রবাসে যারা মারা যান তার বেশিভাগেরই স্ট্রোকে মৃত্যু।

সম্পর্কিত খবর

About Us

NRBC is an open news and tele video entertainment platform for non-residential Bengali network across the globe with no-business vision just to deliver news to the Bengali community.