post
বিশেষ প্রতিবেদন

নিউজার্সিতে নজরুলময় দুই দিন, শতদল'র আয়োজনে সম্পন্ন নর্থ আমেরিকা নজরুল সম্মেলন

দিন দুটি হয়েছিলো নজরুলময়। নজরুলের গান, নজরুলের কবিতা, গান-কবিতায় নাচ আর নজরুলের নাটক এইসবে ভরে থাকলো সারাটিক্ষণ। ১৩ ও ১৪ আগস্ট- দুপুর থেকে রাত অবধি। এটি ছিলো নজরুল সম্মেলন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটির সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের বিদগ্ধ জনেরা জমায়েত হলেছিলেন গার্ডেন স্টেট খ্যাত নিউ জার্সির ইস্ট বার্নসউইকের জেএমপি আর্টস সেন্টারে। এটি ছিলো ১৯তম নর্থ আমেরিকা নজরুল কনফারেন্স। ১৩ আগস্ট দুপুর নাগাদ দর্শকরা জমায়েত হতে শুরু করেন কর্মসূচিতে। তাদের প্রায় সকলেরই ছিলো বাঙালি সাজ-পোশাক। অনুষ্ঠানস্থল সাজানো হয়েছিলো নজরুলের ছবি সম্বলিত ব্যানার পোস্টারে। আর মঞ্চে চলছিলো... গান- নাচ- কবিতার আসর। শুরুতেই সকলের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে গেলে খিলখিল কাজী, কবি নজরুলের নাতনি। তিনি এই আয়োজনকে উল্লেখ করলেন নজরুলকে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সিঁড়ি হিসেবে। আর বললেন, নজরুল তার গান কাব্যে মানুষকেই সবচেয়ে বড় করে দেখেছেন।আয়োজন শুরুতেই জমে ওঠে জার্সি ওয়েভের পরিবেশনায়। নিউ জার্সির সুপরিচিত এই ব্যান্ডসঙ্গীতের শিল্পীরা গাইলেন নজরুলের গান- দুর্গম গিরি-কান্তর-মরু দুস্তর পারাবার ও শুকনো পাতার নুপুর পায়ে...। অনুষ্ঠানটি সাজানো হয় নানা ঢঙে... তারই অংশ হিসাবে পরিবেশিত হলো "নানা রঙে নজরুল"। পরিবেশনায় ছিলো বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউ জার্সি। গুলশান জাহান রিক্তার গাওয়া অগ্নিবীণার ফুল দিয়ে... তুমি হাত খানি যবে রাখো মোর হাতেরও পরে কিংবা আজি মধুরও বাশরি বাজে-র পর সৃজনও ছন্দে আনন্দে নাচো নটরাজ- গানে আমান্ডা আমানুল্লাহর নাচ দেখলো সকলে। শ্রীরূপা ঘোষালের খেলিছো এই বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু.... কিংবা সই ভালো করে বিনুনী বাঁধিয়া দে এইসবে গোটা মঞ্চ তথা চারিপাশ ততক্ষণে নজরুল আবহে। এমনই সময় বিদ্রোহী কবিতা নিয়ে মঞ্চে এলো একটি দল। আবৃতির সাথে সাথে নাচ করে দেখালো শিশুরা। তার মধ্য দিয়ে শেষ হয় "নানা রঙে নজরুল"।এরপরপরই শুরু হয় সৃষ্টি অ্যাকাডেমির পরিবেশনায় "বর্ণিল নজরুল"। তাতেও ছিল গান আর নাচ। আলগা করো গো খোপার বাঁধন... কিংবা ঝিলমিল ঝিলমিল ঢেউ তোলে...এইসব গানে একের পর এক নাচের পালা চললো।রাঙামাটির পথে লো মাদল বাজে বাজের বাশের বাঁশি এই গানে পাহাড়ি সাজে সেজে ঘুঙুর পায়ে নেচে মঞ্চ মাতালো শিশু শিল্পীরা। এইসব নাচ গানের পারফরম্যান্স করে যাচ্ছিলো যারা, তারা সকলেই যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা। যারা চেতনায় ধারণ করে বাংলার সংস্কৃতি। শামুসুন্নাহার নিম্মি আর সাদিয়া খন্দকারের উপস্থাপনায় এগিয়ে চলছিলো অনুষ্ঠান মালা। তাতে প্রথম দিনের আরও পরের দিকে মঞ্চে নাচ-গান আবৃত্তির পরিবেশনা নিয়ে এলো শতদল। এই শতদলই ছিলো এবারের নজরুল সম্মেলনের প্রধান আয়োজক। তাদের উপস্থাপনা "চেতনায় নজরুল"- এ গাইলেন ওস্তাদ সালাহউদ্দিন আহমেদ- অঞ্জলি লহ সঙ্গীতে। পাঠ হলো বিদ্রোহী কবিতা। বলবীর চির উন্নত মম শির। আরো পরিবেশিত হলো- একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী জননী... নমো নমো নমো বাংলাদেশ মমো।লাল-সাদায় সেজে মেয়েরা নাচলো জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখায়। নিল-সাদায় সেজে মেয়েরা নাচলো মেঘেরও ডমরু ঘন বাজে। হলো কবিতা পাঠ- তোমারে পড়েছে মনে। আর পাঠ হলো কবি নজরুলের সেই কালজয়ী বক্তৃতা... যদি আর বাঁশি না বাজে।"যদি কোনদিন আপনাদের প্রেমের প্রবল টানে আমাকে আমার একাকীত্বের পরম শুন্য থেকে অসময়ে নামতে হয় তাহলে সেদিন আমায় মনে করবেন না আমি সেই নজরুল....এই আয়োজনের শেষভাগে পরিবেশিত হলো কারার ওই লৌহ কপাটে একক নৃত্য। এইভাবে নাচে গানে কবিতায় ভরপুর করে তুলে মঞ্চে শুরু হলো উদ্বোধনীর আনুষ্ঠানিকতা। ততক্ষণে নজরুল আবহে দর্শক শ্রোতা মুগ্ধ। আয়োজনের মূল সমন্বয়ক কবির কিরণ অতিথিদের নিয়ে উঠলেন মঞ্চে। মঞ্চে ছিলেন মাহমুদ মোশাররফ হোসেন, ড. জিয়া উদ্দিন, ইঞ্জি. আবুবকর হানিপ, আজিজ আহমদ, সুলতান আহমেদ, রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী, গোলাম ফারুক ভূঁইয়া, খিলখিল কাজী, রাহাত চৌধুরী, অ্যান্থনী পিযুষ, সালাহউদ্দিন আহমেদ,সুজিত মুস্তফা, লিনা তাপসী, গুলশান আরা কাজিসহ আরও অনেকে। মাহমুদ মোশাররফ হোসেন এবারের আয়োজনের পাশাপাশি নজরুল সম্মেলনের গোড়ার দিকের কথা তুলে ধরেন। এই আয়োজনের অন্যতম দুই পৃষ্ঠপোষক রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী ও ইঞ্জি. আবুবকর হানিপ এতে বক্তব্য রাখেন। রায়হানুল তার বক্তব্যে তুলে ধরেন কবি নজরুল আজ থেকে ১০০ বছর আগে যে বক্তব্য রেখে গিয়েছিলেন তা পরিবেশ আন্দোলনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আবুবকর হানিপ জোর দেন শিক্ষার ওপর। তিনি এই প্রবাসে নজরুলের চেতনা ধারণ করে নতুন প্রজন্ম যেভাবে তাদের গড়ে তুলছে তার প্রশংসা করেন। নিজের পরিচালিত ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কথা- তুলে ধরে তিনি বলেন, এই দেশে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে এখানকার ডিগ্রি অর্জন জরুরি। আর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই নিজ নিজ সংস্কৃতির চর্চায় জোর দেওয়া সম্ভব। এই আয়োজনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলো ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। একজন বাংলাদেশ আমেরিকান একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে তা পরিচালনা করছেন এমন একটি বিষয় সকলকে মুগ্ধ করে। দর্শকরা করতালির মাধ্যমে আবুবকর হানিপকে অভিনন্দন জানান। এরপর আবার গান। সুদুর অস্ট্রেলিয়া থেকে গাইতে এসেছিলেন আদিলা নুর। যেনো সুরের লহরী তুললেন তার একের পর এক তিনটি উপস্থাপনায়- সুরেরও বাণি মালা দিয়ে তুমি আমায় ছুঁইয়া ছিলে। আরও গাইলেন- স্বপ্নে দেখি একটি নুতন ঘর। তুমি আমি দুজন প্রিয় তুমি আমি দুজন। আদিলা নুরের শেষ উপস্থাপনা ছিলো পদ্মার ঢেউ রে.... । পৃথিবীর উল্টো পীঠে বসে দর্শক যেনো সত্যিই শুনতে পেলো পদ্মার কুলুকুলু ঢেউয়ের শব্দ তার সুরের লহরীতে। প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয় সামিয়া মাহবুবের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এই শিক্ষার্থী শোনালেন গান- অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে... আর চাঁদ হেরিছে চাঁদ মুখ তার। দর্শক শ্রোতারা সে গানের সুর কানে নিয়ে, চেতনায় নজরুলকে ধারণ করে রাতে ঘরে ফেরেন...।পরের দিন আবার আসেন তারা। নজরুলের টানে। দুপুরে অনুষ্ঠিত হয় নজরুল বিষয়ক সেমিনার। আর বিকেলে গান-কবিতা-নাচের আসর। দ্বিতীয় দিনটিকে মাতিয়ে রাখে বিপা- বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস। নিউইয়র্কভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি এদেশে নতুন প্রজন্মের শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতির চেতনা। বিপার উপস্থাপনায় অনন্যভাবে পরিবেশিত হলো- বিদ্রোহী কবিতা। বাংলা ও ইংরেজির মিশ্রণে অসাধারণ আবৃতির সাথে বিপা'র শিল্পীদের নাচ। সে পরিবেশনায় মুহুর্মূহু করতালি আর ছিলো দর্শকের মুগ্ধতা। দিনের পরের ভাগে গাইলেন সুজিত মুস্তাফা। ঢাকা থেকে এই নজরুল সম্মেলনে অংশ নিতেই যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন এই গুণি শিল্পী। আর আসর শেষ হয় ওস্তাদ সালাহউদ্দিনের গান দিয়ে। কবি নজরুলের প্রয়ান দিবস সামনে রেখে তিনি গাইলেন- সে চলে গেছে দূরে...নজরুল দূরে চলে গেছেন। কিন্তু তিনি রেখে গেছেন চেতনা। সেই চেতনায় উজ্জীবিত বাঙালি তাকে আজও স্মরণ করে। বাংলাদেশ থেকে সুদুর আমেরিকায় এসেও বাঙালি সেই চেতনাবোধে উদ্বুদ্ধ। তারই এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকলো এই ১৯ তম নর্থ আমেরিকা নজরুল সম্মেলন।

post
বিশেষ প্রতিবেদন

পদ্মাসেতু আমাদের গর্বের প্রতীক

পৃথিবীর যে প্রান্তেই যে মানুষটি থাকুকটা কেনো তার ধমনীতে যদি প্রবাহিত বাঙালির খুন, তারই প্রাণে আজ ধ্বনিত হচ্ছে একটি নাম, পদ্মাসেতু। পৃথিবীর ঠিক উল্টো পীঠে বসে আমরা চেয়ে চেয়ে দেখি একটি সেতুর রূপ। কি অপরূপ সাজে সাজানো হয়েছে এই সেতু। মিডিয়ার কল্যাণে কত ছবি, ভিডিও চোখে পড়ছে। আর মুগ্ধ হচ্ছি। তবে শুধু রূপে নয়, এমন এক শক্ত কাঠামো দেওয়া হয়েছে এই সেতুতে যা শতবর্ষের জন্য সকল ধকল নিতে প্রস্তুত। যারা মধ্য দিয়ে দেখছি ১০০ বছর পরের বাংলাদেশকেও।আমরা জানি উন্নয়নের আরেক নাম গতি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দ্রুততম গতির সংযোজন ঘটিয়ে চলছে নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। ফলে আমরা দূর পরবাস থেকেও দেখতে পাই একটি গতিময় সময়ে গতিময় বাংলাদেশকে। যার সর্বশ্রেষ্ঠ সংযোজন এই পদ্মাসেতু। মাত্র একদিন পরে এই সেতুর উদ্বোধন। যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এক নতুন যুগে পা ফেলবে। আর নতুন গতিময়তায় এগিয়ে যাবে উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে।যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতার সঙ্গে যদি মিলিয়ে দেখি, এই দেশে আমরা কী দেখতে পাই? এই দেশে একটি রাজ্যের সঙ্গে অন্য রাজ্যের কানেক্টিভিটির দিকে যদি তাকাই আমরা দেখি অত্যন্ত সুচারূরূপে রচনা করা হয়েছে সেই কানেক্টিভিটি। কোথাও পাহাড়ের খাঁজ কেটে, কোথাও নদীর উপর সেতু রচনা করে। মূলতঃ যোগাযোগটাই উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। সেই হিসেবে এখানে রাজ্যগুলো একে অন্যের সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থায় সংযুক্ত। আর সে কারণে এই দেশে মানুষগুলো যার যে রাজ্যে মন চায় গিয়ে বসতি গাড়ে। কারণ রাজ্যে রাজ্যে দ্রব্যমূল্যে নেই বড় কোনো ফারাক। ফারাক নেই জীবন ব্যবস্থায়। জীবনাচারে প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপকরণে।একটি উদাহরণ দেই। এই দেশে ফ্লোরিডার আবহাওয়া অনেকটা গ্রীস্মমণ্ডলীয় দেশগুলোর মতো। ফলে সেখানে ফলে আম, জাম, লিচুর মতো রসালো ফলগুলো। কিন্তু সেই ফল আমরা ভার্জিনিয়াতে বসেও কিংবা নিউইয়র্কে বসে কিনে খেতে পারি অনেকটা সমমূল্যে। কারণ অতি সহজেই সেইসব ফল যুক্তরাষ্ট্রের অন্য রাজ্যগুলোতে পৌঁছে যায়। কারণ একটাই সহজ ও সাবলীল যোগাযোগ ব্যবস্থা।আমি মনে করি পদ্মাসেতু বাংলাদেশের জন্য সেই সুযোগটিই সবচেয়ে বড় করে আনবে। সবচেয়ে বড় কথা কাছাকাছি টেনে আনবে মানুষগুলোকে। এখন আর দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গের মানুষকে দূরের মনে হবে না। কিংবা রাজধানী ঢাকাকেও দূরের কোনো নগরী মনে হবে না সেই অঞ্চলের মানুষগুলোর কাছে। এই কাছাকাছি করে আনার মধ্য দিয়ে যে কাজের একটি শক্ত ভিত রচিত হবে যা উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।গত কয়েকটি বছর পদ্মাসেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়া দৃষ্টি কেড়েছে সকলের। আমরাও অবাক হয়ে দেখেছি কতটা আত্মনিয়োজনে তৈরি হয়েছে এই সেতু। সেতুর উপকরণ হিসেবে বিশ্বের যেখানে যেটি শ্রেষ্ঠ সেই উপকরণটিই সেই দেশ থেকে আনা হয়েছে। ফলে গুণগত মানে এতটুকু ছাড় না দিয়ে তৈরি হওয়া সেতুকে স্রেফ স্বপ্নের সেতু না বলে একটি ভিশনারি সেতুও বলা চলে। যাতে নিশ্চিত করা হয়েছে শতবর্ষের ভিত।সোয়া ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুতে উপরের তলায় প্রস্তুত হয়েছে চার-লেনের হাইওয়ে, আর নিচের তলায় সিঙ্গল ট্র্যাক রেলওয়ে। সাড়ে সাত বছর ধরে ৩.৬ বিলিয়ন ডলার খরচে বানানো হয়েছে এই সেতু। বিশ্বের ২০ টি দেশের প্রকৌশলীদের প্রকৌশল বিদ্যার প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে এই সেতুতে। ১০টি দেশ থেকে এসেছে এই সেতুর প্রধান উপকরণগুলো। আর বিশ্বের অন্তত ৫০টি দেশ থেকে আসা কোনো না কোনো উপকরণ ব্যবহৃত হয়েছে এই সেতুতে।এই যে আমরা আমাদের উন্নয়ন ও নির্মাণ প্রক্রিয়া অনেকটা দূর পর্যন্ত দেখতে শিখলাম। শ্রেষ্ঠত্বের প্রয়োগ ঘটাতে শিখলাম। এই চর্চা আমাদের শুরু হলো। এটাই আমাদের সময়ের তরফ থেকে হয়ে থাকবে ভবিষ্যত সময়ের জন্য এক উপহার। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে যা গর্বের প্রতীক হয়ে থাকবে।আমি ব্যবসায়ী দৃষ্টিকোণ থেকে যদি দেখি বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিপুল এক গতির সঞ্চার করবে এই সেতু। কাচামালের দ্রুত যোগান মানেই শিল্পের উৎপাদন তরান্বিত হওয়া সেতো আছেই কিন্তু যে কৃষক ফসল ফলায় মাঠে, তার উৎপাদিত পণ্যও এখন স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পৌঁছে যাবে ক্রেতা কিংবা ভোক্তার কাছে ফলে কৃষি-বাণিজ্য তরান্বিত হবে। যে মানুষটি রাজধানী শহরে যেতে চায় কাজের খোঁজে তার জন্য শহরটি কাছাকাছি হবে, ফলে তার বেকারত্ব ঘুচবে। কিন্তু সেতুপথ তো একদিকে ধাবিত নয়, এর সমান দুটি লেন দুই দিকে ধাবিত, অর্থাৎ রাজধানীমুখি যেমন মানুষ হতে পারবে, তেমনি রাজধানির সুবিধাগুলো পৌঁছে যাবে সেই মানুষের কাছে। উভয়পথেই একটি নতুন দিনের সূচনা হবে। ফলে, যেমনটা বলছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রে মানুষ যেমন যে কোনো রাজ্যে গড়তে পারে তার স্বস্তির, সম্মৃদ্ধির নিবাস, তেমনি বাংলাদেশেও মানুষগুলো তাদের ইচ্ছে মতো থাকতে পারবে সেতুর মাধ্যমে সংযুক্ত যে কোনো জেলায়, একই সুযোগ সুবিধা নিয়ে।আর কেবলতো সড়কপথই নয়, সেতুতে রেলপথও রয়েছে। ফলে দ্রুতগতির ট্রেন এখন গোটা বাংলাদেশে তার রুটগুলো তৈরি করে নিতে পারবে। এখানেও একটু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চাই। এখানেও অধিকাংশ স্টেট সড়কপথের পাশাপাশি ট্রেন লাইনেও সংযুক্ত। যা যোগাযোগের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করেই উন্নয়নে গতি দেয়। আর নিশ্চিত করে বিকেন্দ্রীকরণ। আমরা এখন স্পষ্ট করেই ধারনা করতে পারছি এক উন্নত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল যা হয়তো আগামী ৫-৭ বছরেরই চাক্ষুস করতে পারবো।এই সেতু এইসব অঞ্চলের দারিদ্র বিমোচন করবে। অর্থনীতিকে করে তুলবে অন্তর্ভূক্তিমূলক আর অংশগ্রহণমূলক। সড়ক ও রেলপথে নতুন যে নেটওয়ার্ক তৈরি হবে তাতেই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এসব অঞ্চলে। নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করবে। কমবে মানুষের যাতায়াত খরচ, পণ্য পরিবহণ খরচ ও সময়। এতে অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশ থেকে এখনই স্পষ্ট হচ্ছে, স্রেফ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর অতিরিক্ত সক্রিয়তায় আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশের সার্বিক জিডিপি ২ শতাংশ বেড়ে যাবে।এই সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করলো। বিশ্বকে দেখালো যে, বাংলাদেশ পারে। বস্তুত মানুষ চাইলেই পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা আর বাংলাদেশের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনই এই সেতু তৈরির প্রধান ভিত। এর মধ্য দিয়েই আপাত অসম্ভব মনে হওয়া একটি কাজ সম্ভব করে তুললো বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশ সেটা করলো স্রেফ নিজস্ব অর্থায়নে।দূর প্রবাসে বসে সেই গর্বে গর্বিত আমি ও আমরা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর মধ্যদিয়ে একজন বাংলাদেশি আমেরিকান হিসেবে আমরা এদেশেও গর্ব করতে পারবো। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে কতবড় ভুল ছিলো তার এক জাজ্বল্যমান প্রমাণ এই পদ্মাসেতু। সে কথা আমরা বলতে পারবো জনে জনে। বুক ফুলিয়ে বলতে পাবরো, আমরাও পারি। আমাদের সকলের গর্বের প্রতীক এই পদ্মাসেতু। পদ্মাসেতুকে ঘিরে আমাদের আগামী দিনের গল্পগুলো হোক কেবলই সাফল্যের আর এগিয়ে চলার। 

post
বিশেষ প্রতিবেদন

বিপুল উদ্দীপনা ও আনন্দ আয়োজনে সম্পন্ন ডব্লিউইউএসটি'র কনভোকেশন ২০২২

অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি- ডব্লিউইউএসটি'র কনভোকেশন ২০২২। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াস্থ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীকে তুলে দেওয়া হলো তাদের গ্রাজুয়েশন সনদ ও সম্মাননা। শনিবার (১৮ জুন) ভার্জিনিয়ার জর্জ সি. মার্শাল হাইস্কুল মিলনায়তনে সম্পন্ন হয় এই গ্রাজুয়েশন সেরিমনি। কালো গাউন মাথায় গ্রাজুয়েশন হ্যাট পরে সেরিমনির মূল আকর্ষণ হয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের সনদ নিলেন, আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভরিয়ে তুললেন দিনটিকে। এতে প্রধান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টির বোর্ড অব সুপারভাইজর এর চেয়ারম্যান জেফরি সি. ম্যাককে। কর্মসূচিটিকে স্রেফ সনদ বিতরণে সীমিত না রেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়োজন করে একটি বিশেষ সেমিনারের। তাতে কি-নোট স্পিকার হিসেবে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন ড. রায়ান সাদী, যুক্তরাষ্ট্রে সমহিমায় প্রতিষ্ঠিত একজন অনন্য বাংলাদেশি আমেরিকান চিকিৎসা-গবেষক। ক্যান্সারের সফল চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করে তিনি কুড়িয়েছেন বিরল সম্মান। শিক্ষার্থীদের তিনি নিজের জীবনের সাফল্যের গল্পটি শোনান এবং তাদের উদ্ধুদ্ধ করেন ভবিষ্যতের পথ চলার নানা দিকনির্দেশনায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ, প্রেসিডেন্ট ড. হাসান কারাবার্ক শিক্ষার্থীদের হাতে সনদ বিতরণের পাশাপাশি তাদের বক্তৃতায় তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যত কর্মপন্থার কথা। অনুষ্ঠানে অভ্যাগত অতিথি হয়ে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে স্বীয় ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত অন্য আরও অনেক বাংলাদেশি-আমেরিকান। যারা এই গ্রাজুয়েশন-কনভোকেশনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। এদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিতে সফল বাংলাদেশি-আমেরিকান ডেমোক্র্যাট সিনেটর শেখ রহমান, যুক্তরাষ্ট্রে কূটনীতিতে সফল ব্যক্তিত্ব প্রথম মুসলিম বাংলাদেশি-আমেরিকান রাষ্ট্রদূত এম. ওসমান সিদ্দিক,  শিক্ষা ও গবেষণায় সফল ব্যক্তিত্ব আইট্রিপলই'র প্রেসিডেন্ট ড. সাইফুর রহমান ও মনমাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং গ্লোবাল সোশ্যাল ওয়ার্ক এডুকেশন কমিশনের কো-চেয়ার ও কমিশনার ড. গোলাম এম. মাতবর, তথ্যপ্রযুক্তির সফল প্রবক্তা ও উদ্যোক্তা, ইউটিসি অ্যাসোসিয়েটস, কোডার্সট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও সিইও আজিজ আহমদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সিদ্দিক শেখ ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ফারহানা হানিপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. জাফর পিরিম ও ড. শ্যান চো ছাড়াও শিক্ষকদের অনেকেই অংশ নেন এই কনভোকেশনে। দর্শক সারিতে অন্যান্য বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের নাতি ডেভিড রিগবি। যিনি নিজেও একজন বিজ্ঞানী। মাস্টার অব দ্য সেরিমনি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস'র পরিচালক ড. মার্ক এল রবিনসন। সঞ্চালনায় ছিলেন ডব্লিউপিএলজি এবিসি- টেন'র সিনিয়র প্রডিউসার ও করেসপন্ডেন্ট ড. আনিভা জামান। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেফরি সি. ম্যাককে বলেন, বহুজাতির সম্মিলনই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শক্তি। তাদের অন্তর্ভূক্তিমূলক, সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার যে নীতিতে  যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত তারই একটি উদাহরণ এই ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। এর শিক্ষার্থীরা বিশ্বের নানা দেশ থেকে এদেশে এসে তাদের উচ্চতর শিক্ষা নিচ্ছে, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষা গ্রহণ করছে, যা এই সময়ের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে বক্তৃতায় উল্লেখ করেন তিনি। জেফরি বলেন, ভার্জিনিয়ায় ৯০০০ টেকনোলজি কোম্পানি রয়েছে, এই শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনা শেষ করে এসব কোম্পানিতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে যোগ দিতে পারবে, এটি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। "আহা আমি নিজেও যদি পারতাম এমন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন বিষয়ে শিক্ষা নিতে," আক্ষেপের সুরে বলেন জেফরি সি. ম্যাককে। কি-নোট স্পিকার ড. রায়ান সাদী তার ব্যক্তি জীবনের গল্প দিয়ে শুরু করেন এবং একটি স্বপ্ন লালন করলে তা যে পূরণ হবেই সে কথাই শোনান শিক্ষার্থীদের। জীবনের প্রতিটি ক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্বে ব্যবহার করার কথা বলেন আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে অসীম সম্ভাবনা রয়েছে তা উল্লেখ করে প্রত্যেককে মানবতার শক্তিতে বলিয়ান হওয়ার আহ্বান জানান। আত্মপ্রত্যয়ী হতে বলেন আর পরিশুদ্ধ মনের অধিকারী হতে বলেন প্রতিটি শিক্ষার্থীকে। সবচেয়ে বেশি যেটি প্রয়োজন তা হচ্ছে নিজেকে জানা, প্রত্যেকে তাকে নিজেকে জানতে পারলে, নিজের সক্ষমতা, দক্ষতা ও যোগ্যতা জানলে এরপর আত্ন নিয়োজনেই যে কোনো অর্জন সম্ভব, বলেন ড. রায়ান সাদী। চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপ তার বক্তৃতায় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এখন যারা গ্রাজুয়েটেড হলেন তারা সকলেই গত বছরগুলোতে একটি কঠিন ও অনিশ্চিত সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন। কিন্তু আমি দেখেছি শিক্ষার্থীদের অসীম শক্তি ও আত্মপ্রত্যয়। আর সে কারণেই তারা সফল হতে পেরেছেন। আর তারই পথ ধরে আজ তাদের সেই সাফল্যই আজ উদযাপিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য সাফল্যের একটি দৃঢ় ভিত রচনা করে দিয়েছে। এখন প্রত্যেকের মধ্যেই তৈরি হয়েছে অর্জনের সকল সম্ভাবনা। যা ভবিষ্যতের যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করবে, বলেন আবুবকর হানিপ।   এই গ্রাজুয়েটরা প্রত্যেকেই এখন ওয়াশিংটন সায়েন্স অ্যান্ট টেকনোলজি-ডব্লিউইউএসটি'র এলামনি এবং গোটা বিশ্বের কাছে এই বিশ্ববিদ্যালয়র প্রতিনিধি। তাদের প্রত্যেকের সাফল্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বাড়াবে। আর ভবিষ্যতে এই শিক্ষার্থীরা তাদের যে কোনো প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়কে পাশে পাবে, বলেন চ্যান্সেলর হানিপ। ড. হাসান কারাবার্ক বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার পাশাপাশি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে সেটিই সবচেয়ে বড় কথা। অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প কিছু নেই। শিক্ষার্থীেদর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন সেটি অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। যা তাদের একই ধরণের উদ্যোগ নিতে উদ্যমী করে তুলবে।এসময় শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রিপ্রাপ্ত হিসেবে ঘোষণা করেন ড. হাসান কারাবার্ক। সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারায় ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজির গ্রাজুয়েটদের এবং কর্তৃপক্ষকে শুভেচ্ছা জানান সেনেটর শেখ রহমান। এম. ওসমান সিদ্দিক শিক্ষার্থীদের দৃঢ়প্রত্যয়ী ও সাহসী হওয়ার উদ্দীপনা যোগান। এবং বলেন, জীবনের পথ চলায় সেটাই করবেন, যা আপনার হৃদয়ে লালিত। ড. সাইফুর রহমান বলেন, দেশ আপনার জন্য কি করতে পারবে সেটি যেমন জরুরি তেমনি আপনি দেশের জন্য কি করতে পারছেন সেটিও জরুরি। কারো কাছে সহায়তা প্রত্যাশার আগে তাকে কি সহায়তা করতে পারেন সেটি নিশ্চিত করতে হবে। একবিংশ শতাব্দীর জন্য উপযোগী উৎপাদনমুখী কর্মশক্তি তৈরিতে কাজ করছে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, এখানকার শিক্ষার্থীরা তাদের যাত্রা শুরুই করতে পারছে এই ভবিষ্যত কর্মশক্তিতে তাদের স্থান করে নিয়ে, এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার, বলেন অধ্যাপক ড. গোলাম এম মাতবর। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি সক্ষমতার পাশাপাশি নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ওপর জোর দেন। এবং বলেন, এসব কিছুর সমন্বয়েই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। সিদ্দিক শেখ এই বিশ্ববিদ্যালয় আপনাদের জন্য একটি সফল ভবিষ্যত অর্জনের পথ খুলে দিয়েছে। ভবিষ্যতের একটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আপনার বর্তমান শিক্ষার্থী হিসেবে গ্রাজুয়েটেড হলেন এটাই হতে পারে আপনাদের গর্বের বিষয়। শিক্ষার্থীদের প্রতি তিনি মনযোগী, সৎ ও বিনয়ী হওয়ার আহ্বান জানান। তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতাভিত্তিক একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করা প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে ভাগ্যবান বলে উল্লখ করেন আজিজ আহমদ। এই শিক্ষার মধ্য দিয়ে যে দক্ষতা অর্জিত হয়েছে সেটাই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বিশ্বের কর্মজগতের উপযোগী করে তুলবে। আর সময়ের প্রয়োজনগুলো সঙ্গে শিক্ষার্থীরা তাদের এই জ্ঞানকে যতটা সম্পৃক্ত করতে পারবে তাদের সাফল্যই তত বেশি আসবে, বলেন তিনি।  ফারহানা হানিপ তার বক্তৃতায় নতুন গ্রাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আজ আপনাদেরই দিন। ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলোজি'র গ্রাজুয়েটরা এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই আয়না। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীরা একে অন্যের প্রতিবিম্ব হয়ে কাজ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা দেশের নানা জাতির শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে, তাদের উপস্থিতিতে প্রতিটি ক্লাসরুম যেনো জাতিসংঘের সম্মেলন কক্ষ হয়ে ওঠে। আর এই ডাইভার্সিটিই প্রকৃত সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি করে, বলেন ফারহানা হানিপ। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাইবার সিকিউরিটিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করে সনদপ্রাপ্ত জোসেফাইন মিলি চুং। তিনি বলেন, একটি পূর্ণসময়ের চাকরি করে, শিশু সন্তান লালন পালন করেও আমি এই ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পেরেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের সর্বোচ্চ যত্ন ও গুরুত্ব আরোপের কারণে। অনলাইনে সাইবার সিকিউরিটি কোর্স সম্পন্ন করে এই ডিগ্রি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এখন কাজ করছেন মিলি চুং। পরে একে একে শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের গ্রাজুয়েশন ডিগ্রির সনদ তুলে দেওয়া হয়। আর সবশেষে শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠে ফটো সেশনে এবং তারই সঙ্গে আনন্দ বিনোদনে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই এসেছিলেন তাদের পরিবার-পরিজন সাথে নিয়ে।দিনের পরের ভাগে সন্ধ্যায় অভ্যাগত অতিথিরা যোগ দেন কনভোকেশন ডিনারে। স্থানীয় একটি হোটেলে আয়োজিত এই ডিনারে অতিথিরা একজন বাংলাদেশি আমেরিকান হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম কোনো পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য আবুবকর হানিপকে অভিনন্দিত করেন। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান রোকেয়া হায়দার, ভয়েস অব আমেরিকার অপর বর্ষিয়ান সাংবাদিক সরকার কবিরউদ্দিন, এএবিজিএম'র সিইও আবদুল আলিম, ই-লার্নিংয়ে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরুল খান, সাংবাদিক উপস্থাপক কবিতা দেলাওয়ার, ভারতীয় সাংবাদিক রঘুবীর গোয়েল প্রমুখ। বক্তারা আবুবকর হানিপের  এই উদ্যোগকে পাহাড় সড়ানোর মতো একটি কাজ বলে উল্লেখ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সম্ভাবনার দিক তুলে ধরে এই যাত্রা অব্যহত রাখতে ইঞ্জি. আবুবকর হানিপকে উৎসাহ যোগান এবং তার ভিশন ও মিশনের প্রশংসা করেন তারা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাপ্লায়েড রিসার্চ অ্যান্ড ফোটোনিক্স'র প্রেসিডেন্ট ড. আনিস রহমান, এএবিইএ সেন্ট্রাল এর চেয়ারম্যা ড. ফয়সল কাদের, বাংলাদেশের প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ হোসেন, কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন, ক্রিকপয়েন্ট'র সিইও কাজী জামান, বাই'র সভাপতি সালেহ আহমেদ, ভারতীয় সাংবাদিক রঘুবীর গোয়েল, টার্কিস কমিউনিটি নেতা ও উদ্যোক্তা ড. ইউসুফ চেতিনকায়া,  ড. তার্গে পোলাদসহ কয়েকজন। সঙ্গীত ও উপাদেয় খাবারে এই সান্ধ্যভোজ হয়ে ওঠে আনন্দময়। গান গেয়ে শোনায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত নতুন প্রজন্মের শিল্পী নাফিসা নওশিন, আনিকা হোসাইন ও আনিসা হোসাইন।সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম আইগ্লোবাল ইউনিভার্সিটি থেকে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি করা হয়েছে। গ্রাজুয়েটেডরা সকলেই ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে তাদের সনদপত্র পাবেন।২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সফল বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ইঞ্জি. আবুবকর হানিপের ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বাংলাদেশি আমেরিকানের হাতে পরিচালিত প্রথম কোনো পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে তথ্য-প্রযুক্তি, সাইবার সিকিউরিটি ও এমবিএ- বিবিএ কোর্সে বর্তমানে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। বিশ্বের ১২১ দেশের শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় সনদপ্রাপ্ত হয়েছেন নয়তো বর্তমানে অধ্যয়নরত রয়েছেন।

post
বিশেষ প্রতিবেদন

ইসলাম অর্থ শান্তি নয় আত্মসমার্পন

এলামী মোঃ কাউসার: সমস্ত প্রশংসা সেই মহান রব্বুল আলামিনের জন্য যে আল্লাহপাক রব্বুল আলামিন আমাদের কে একটি মুসলিম সমাজে জন্মগ্রহণ করার তৌফিক দান করেছেন। তার দরবারে আরো প্রশংসায় অবনীত হই এই জন্য যে, যিনি আমাদের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশ ও একটি স্বাধীন ভূখণ্ড উপহার দিয়েছেন। এই স্বাধীন ভূখণ্ডে বসবাস করে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ। যাদের মধ্যে মুসলিম প্রায় ৯০ শতাংশ। এদের মধ্যে আলেম উলামা জ্ঞানীগুণী এবং ইসলাম শব্দটির ব্যাখ্যা করার যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন তাদের সংখ্যাই বেশি। আমার মত এক অধম বান্দার দ্বারা ইসলামের ব্যাখ্যা করা সহজ বিষয় নয়। তরপরেও মহান রব্বুল আলামিন তার এই ছোট্ট গোলামের জ্ঞানের ঝুলিতে যতটুকু দিয়েছেন তা যুক্তি মাফিক ও প্রমাণসহ উপস্থাপন করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ ওমা তৌফিকি ইল্লাহ বিল্লাহ।অনেকে ইসলাম শব্দের অর্থ করেন শান্তি। আমাদের মুসলিম সমাজসহ বিভিন্ন ধর্মের পণ্ডিতরা এবং রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে গ্রাম্য পুলিশ পর্যন্ত একই অর্থ করেন। বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তব্য ও আলোচানা সভায় জ্ঞানী পণ্ডিতরা ইসলাম অর্থ শান্তি আখ্যায়িত করেন। যারা ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা জানেন না এবং ইসলাম সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান রাখেন না তারাই এমন ভুল অর্থ করেন। তাদের বক্তব্য হলো এটি নীরিহ গোবেচারা ধর্ম । এক গালে চড় দিলে আরেক গাল পেতে দাও, তোমরা কোর্তাটি নিয়ে গেলে জোব্বাটি দিয়ে যাও । এমন ! আসলে কি তাই? না। বরং এটি সত্যের অপলাপ। ইসলাম আরবী শব্দ যার অর্থ আত্মসমার্পন করা। আর শান্তির আরবী শব্দ সালাম। আরবী ভাষার বিখ্যাত ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অভিধান ইবনে মনজুর রচিত “লিসান আল আরাব” এ বলা হয়েছে ইসলাম শব্দটি ইসতিসলাম (استسلام) শব্দ থেকে নেয়া হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে কারো কাছে নত হওয়া আন্তসমর্পন করা। অনেকে মনে করেন সালাম ( ‍سلم ) এই তিনটি অক্ষর থেকে যেহেতু ইসলাম ও সালাম উভয় শব্দের উৎপত্তি তাই উভয়ের অর্থ একই হবে। অথচ বাস্তবে একই মূলধাতু থেকে উৎপন্য বিভিন্ন শব্দের অর্থ ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমনঃ سلم থেকে উৎপন্য শব্দ সমূহ হলো- ইসলাম - اسلام - আন্তসমর্পন সালাম - سلام - ভালথাকা, শান্তি সালমা - سلما - চামড়ার প্রস্তুতি (ট্যানারী) সালিমা - سليما - বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া (স্ত্রীবাচক) সালিম - سليم - বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া (পুংবাচক) আসলাম - اسلم - শপে দেওয়া (submit) ইসতিসলামা - استسلاما - আন্তসমর্পন করা মুসলী - مسل - যাতে কোন মতদ্বন্দ্ব হয়নি (Undisputed) বিস্তারিত জানতে দেখুন সাহীব বিন আব্বাদ (الصا حب بن عباد) ( মৃত ৩৮৫ হিজরী ) রচিত আলমুহীত ফিল লোগা ( المحيط قي اللغة) ddd سلم অধ্যায় । হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ ফিকহাহ গ্রন্থে ইমাম ইবনে আবেদীন (র:) রচিত রুদদুল মুহতারী (رد المحتار علي المختار شرح تنوير الابصار ) বলা হয়েছে اعلم ان الاسلم علي وجهين: شرعي وهو بمعني الايمان , ولغوي - وهو بمعني الاستسلام والا نقياد كما في سرح العمده للنسفي - (رد المحتار6/298) অর্থাৎ জেনে রাখো ইসলামের অর্থ দুইটি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় এটার অর্থ হচ্ছে ঈমান। আভিধানিক ও শাব্দিক অর্থে এর অর্থ হলো অন্তসমর্পন (استسلام) , এবং মান্য করা ( الا نقياد) ঠিক যেভাবে ইমাম নাসাফী আল উমদাহ এর ব্যাখ্যা গ্রন্থে এসেছে। ইমাম ইবনে তাইমিয়া মাজমু আল ফতোয়ায়ে বলেছেন , فالاسلام يتضمن الاستسلا لله وحده (مجموع الفتاوي 3/91)  অর্থাৎ ইসলামের অর্থের মধ্যে রয়েছে এক আল্লাহ কাছে আত্মসমার্পন করা। ইসলামের শত্রুরা আমাদের মধ্যে বিভিন্ন ভাবে অনেক ভুল ধারনা ঢুকিয়ে দিতে চায় । যাতে আমরা প্রকৃত ইসলাম না জানি, সেটা থেকে দূরে থাকি। তাহলে তারা আমাদের পরাজিত করে রাখতে পারবে। যার একটা জলন্ত উদাহরণ কালেমা, ইলাহ, রব এবং ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা ও ভুল আভিধানিক পারিভাষিক অর্থ। যার কারণে আমরা জাতিকে ভুল পথে ধাবিত হতে দেখছি। অনেক মুসলমান সঠিক ব্যাপারটা না জানার কারনে ইসলাম মানে শান্তি বলে থাকেন। কেন আমরা বলতে পারি না কেবল সঠিক ইসলামের ছায়া তলে আসলেই শান্তি নীহিত। ইংরেজরা যখন কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন, তৎকালীন ইংরেজ গভর্নর ড. ম্যাকলিনকে মাদ্রাসার সিলেবাস তৈরির দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। এই সুযোগে তারা ইসলামের অনেক মৌলিক শব্দ যেমন, ইসলাম, ইলাহ, রব, তাওহীদ, শিরক, তাগুদ, জিহাদ ইত্যাদি পরিবর্তন করে। বাতিলের সাথে ইসলামের অনিবার্য দ্বন্দ্ব ও সংঘাতকে এড়ানোর জন্য উদ্দেশ্যমূলক ভাবে ইসলামের অর্থ শান্তি করে থাকে। আমাদের ইসলাম সম্পর্কিত সঠিক জ্ঞান অর্জনের শুরু হোক স্বয়ং ইসলাম শব্দের অর্থ দিয়ে। আল্লাহ আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে কবুল করুন । আমীন।লেখক: এলামী মোঃ কাউসারআল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়কায়রো মিশর।

post
বিশেষ প্রতিবেদন

কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মজয়ন্তী

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মজয়ন্তী আজ। বাংলাসাহিত্যে যার আগমন ছিলো বীরের মতো। চির উন্নত শিরের মানুষটির কবিতা, গান, উপন্যাস ও গল্পে বাঙালি জেনেছে বীরত্বের ভাষা, পেয়েছে দ্রোহের মন্ত্র। একসাথে মানবতার কথা সাম্যের কথা তিনি বলেছেন। আর উল্টোতলে তার কোমল হৃদয়খানি ছিলো প্রেমময়তায় আচ্ছন্ন। সাহিত্যকর্ম দিয়ে কাজী নজরুল ছুঁয়েছিলেন বাঙালির আবেগ আর অনুভূতিকে।১৮৯৯ সালের ২৫ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বাঙালি কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ ও দার্শনিক। বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি ছিলেন কবি। প্রায় তিন হাজার গান লিখেছেন, যার বেশির ভাগেরই সুরারোপও করেছেন নিজে। নজরুলসঙ্গীত হিসেবে আজও যা সমাদৃত, আর সমাদৃত থাকবে চিরকাল। ‘দুখু মিয়া’ নাম পেয়েছিলেন ছেলেবেলা। গ্রামের মসজিদে মুয়াজ্জিন হয়ে আজান দিতেন, রুটির দোকানে রুটি বানাতেন। ছিলেন লেটোর দলের সদস্য। মাত্র নয় বছর বয়সে ১৯০৮ সালে তিনি পিতৃহারা হন। তবে অল্প বয়স থেকেই তিনি লোকসঙ্গীত রচনা শুরু করেন। এর মধ্যে রয়েছে- চাষার সঙ, শকুনীবধ, রাজা যুধিষ্ঠিরের সঙ, দাতা কর্ণ, আকবর বাদশাহ, কবি কালিদাস, বিদ্যাভূতুম, রাজপুত্রের গান। ১৯১৭ সালের শেষভাগ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত কর্মজীবনের মধ্যে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক কর্পোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদারের পদে উন্নীত হয়েছিলেন। করাচি সেনানিবাসে বসেই নজরুল যে রচনাগুলো লেখেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাউন্ডুলের আত্মকাহিনী, মুক্তি, হেনা, ব্যথার দান, মেহের নিগার, ঘুমের ঘোরে, কবিতা সমাধি ইত্যাদি। যুদ্ধ শেষে কলকাতায় এসে তিনি সাহিত্য-সাংবাদিকতা জীবনের মূল কাজগুলো শুরু করেন। তৎকালীন বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত কবির বাঁধনহারা, শাত-ইল-আরব, বাদল প্রাতের শরাব, আগমনী, কোরবানি, ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম সাহিত্যকর্মগুলো ব্যাপক সমাদৃত হয়। ১৯২১ সালের অক্টোবরে তিনি শান্তিনিকেতনে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ১৯২১ সালের মাঝামাঝি কুমিল্লার বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে আসেন নজরুল। আর এখানেই প্রমীলা দেবীর সঙ্গে প্রণয় থেকে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন কবি। ১৯২১ সালের ২১ নভেম্বর ভারতব্যাপী হরতাল ও অসহযোগের সময় রাজপথে নেমে আসেন তিনি। ১৯২২ সালে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটির মধ্য দিয়ে সারা ভারতের সমাজে সাড়া ফেলে দেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯২২ সালের ১২ আগস্ট নজরুল ধূমকেতু পত্রিকা প্রকাশ করেন। রাজনৈতিক কবিতা প্রকাশিত হওয়ায় ১৯২২ সালে পত্রিকাটির ৮ নভেম্বরের সংখ্যাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। একই বছরের ২৩ নভেম্বর তার যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং একইদিনে তাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে কলকাতায় নেয়া হয়। ১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারি নজরুল আত্মপক্ষ সমর্থন করে চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে জবানবন্দি দেন। তার এ জবানবন্দি বাংলা সাহিত্যে ‘রাজবন্দির জবানবন্দি’ নামে বিশেষ সাহিত্যিক মর্যাদা লাভ করেছে। ওই বছরের ১৬ জানুয়ারি বিচারের পর নজরুলকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। জেলে বসেই তিনি ‘আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’ কবিতাটি রচনা করেন। কাজী নজরুল ইসলাম মধ্যবয়সে পিকস্ ডিজিজে আক্রান্ত হন ও বাকশক্তি হারান। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। ১৯৭২ সালে ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। এ সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন। ১৯৭৬ সালে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয় এবং ‘একুশে পদক’ দেয়া হয়। সে বছরের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

post
বিশেষ প্রতিবেদন

পিপলএনটেক এর ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশের স্বনামধন্য আইটি প্রতিষ্ঠান পিপলএনটেক বাংলাদেশ অফিসের ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।শনিবার (২৩ এপ্রিল) ২১ শে রমজান বৈকাল ৫ ঘটিকায় পিপলএনটেকের নিজস্ব অফিস রুমে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাশরুল হোসেন খান লিয়নের সভাপতিত্বে এই ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে পিপলএনটেক এর সাবেক ডিএমডি লায়ন ইউসুফ খানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত আইগ্লোবাল ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর, পিপলএনটেক, এনআরবি কানেক্ট টিভির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আবু বকর হানিপ সহ যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারী এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য মোনাজাত করা হয়।উক্ত দোয়া ও ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্হিত ছিলেন পিপলএনটেক'র উপদেষ্টা জনাব আবুল হোসেন মিয়া। আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক জনাব লিয়াকত হোসেন খান সহ পিপলএনটেকের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগের ফ্যাকাল্টিবৃন্দ ও শুভানুধ্যায়ীগণ।

post
বিশেষ প্রতিবেদন

এনআরবিসিকে দেয়া ভাষাসৈনিক শামসুল হুদার বিশেষ সাক্ষাতকার

ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে গৌরবময় অবদান রাখেন ভাষাসৈনিক লায়ন শামসুল হুদা। বর্তমানে তিনি বসবাস করছেন নিউইয়র্ক স্টেট এর বাফেলো সিটিতে। ভাষাসৈনিক শামসুল হুদা ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ সালের চরম মূহূর্ত এবং তৎপরবর্তী পর্যায়ে ১৯৫৬ সালে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা লাভ ও আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক বিজয় অর্জন পর্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের চরম মূহুর্তে ১৪৪ ধারা অমান্য করে সালাম বরকত জব্বারদের সাথে মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। চোখের সামনে ভাষার জন্য শহীদ হতে দেখেছেন রফিককে। সেদিন প্রাণে বেচে গেলেও মিছিল থেকে গ্রেফতার হয়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে দীর্ঘদিন কারাবরণ করেন ভাষা সৈনিক শামসুল হুদা। ছাত্র রাজনীতি ও ভাষা আন্দোলনে অসামান্য অবদান রাখায় একুশে পদকসহ এ যাবত ১০০ টিরও অধিক সম্মাননা পদক, স্মৃতি পদক ও পুরষ্কার লাভ করেছেন তিনি। লেখক হিসেবেও শামসুল হুদার রয়েছে এক উজ্জল পরিচিতি। বাংলা ও ইংরেজী লেখায় সমান দক্ষ শামসুল হুদার এই উভয় ভাষাতেই রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। ১৯৩২ সালের ১লা ডিসেম্বর ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার অন্তর্গত চর চান্দিয়া গ্রামে এক সম্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এ ভাষাসৈনিক। 

About Us

NRBC is an open news and tele video entertainment platform for non-residential Bengali network across the globe with no-business vision just to deliver news to the Bengali community.