post
এনআরবি লাইফ

মালয়েশিয়ায় যেমন হলো ঈদ উদযাপন

ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যর মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়ায় উদযাপিত হয়েছে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে অবস্থানরত প্রবাসীরাও এই ঈদ উৎসবে শরিক হন। পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনার পর মুসলিম সম্প্রদায় যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করেছেন এ উৎসব। করোনা মহামারীর কারণে বিগত দুটি বছর দেশটিতে সবাইকে ঘরোয়া ভাবেই কাটাতে হয়েছে ঈদ। তাই এবারের ঈদ আনন্দ সকলের কাছে একটু ভিন্ন। সকলের মাঝেই ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে ।    সোমবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানী কুয়ালালামপুরে জাতীয় মসজিদ নেগারায় সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদ নেগারায় ঈদের নামাজে অংশ দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।ঈদুল ফিতরের জামাতে শরিক হতে স্থানীয়দের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন প্রবাসীরাও। তবে প্রতিটি মসজিদেই প্রবাসীদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়।নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অনেকে দেশে ফোন করে স্বজনদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন।এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে এবার মালয়েশিয়ার বাংলাদেশি রেস্তোরাঁগুলোতে থাকছে নানা ধরণের মুখরোচক খাবারের ব্যাপক আয়োজন।ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ গোলাম সারওয়ার দেশটিতে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।এছাড়াও চৌকিট বাংলাদেশি মসজিদ বায়তুল মোকাররম, কোতারায়া বাংলা মসজিদ, বুকিট বিনতাং বাংলাদেশি মসজিদ, সুবাংজায়া বাংলাদেশি মসজিদ, শ্রীমুডা বাংলাদেশি মসজিদ, ক্লাং, পেনাং, সুঙ্গাইবুলু, পুচং, মালাক্কা, পেনাং, জহুরবারু প্রদেশের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা গুলোতে শত শত প্রবাসী বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

post
এনআরবি লাইফ

সদকাতুল ফিতরের পরিচয় ও আদায় পদ্ধতি

পবিত্র রমযান মাসে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে। সদকাতুল ফিতর একটি অন্যতম ইবাদত। ঈদের দিন গরিবদের খাবারের জন্য শরীয়ত প্রদত্ত একটি ব্যবস্থাপত্র এই ফিতরা। সদকাতুল ফিতর সম্পর্কে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা এ দিনটিতে তাদেরকে অন্যের কাছে চাওয়া থেকে বিরত রাখো’। যাকাতের মতো এটিও দরিদ্র মানুষের ওপর মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত আমলী সহযোগিতা। ইসলামী শরীয়তের হুকুম মোতাবেক ঈদের দিনের ফজরের নামাযের আগে পর্যন্ত যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তারও ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব।ফিতরা কী?ফিতরা বা ফেতরা আরবী শব্দ, যা ইসলামে যাকাতুল ফিতর (ফিতরের যাকাত) বা সাদাকাতুল ফিতর (ফিতরের সদকা) নামে পরিচিত। ফিতর বা ফাতুর বলতে খাদ্যদ্রব্য বোঝানো হয়, যা দ্বারা রোযাদাররা রোযা ভঙ্গ করেন। ইসলামী শরীয়তের হুকুম মোতাবেক এটি একটি ওয়াজিব আমল। ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় পর্যন্ত জীবিকা নির্বাহের অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী ছাড়া নেসাব পরিমাণ বা অন্য কোনো পরিমাণ সম্পদের মালিকদের পক্ষ থেকে গরিবদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণের একটি অর্থ প্রদান করার বিশেষ আয়োজনকে সদকাতুল ফিতর বলা হয়। জনপ্রতি আধা সা অর্থাৎ এক সের চৌদ্দ ছটাক বা পৌনে দুই সের গম বা সমপরিমাণ গমের মূল্য ফিতরা হিসেবে প্রদান করতে হবে। ফিতরার পরিমাণনবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মোট চারটি পণ্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা হত, খেজুর, কিশমিশ, জব ও পনির। হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রাযি.) বলেন, অর্থ : আমাদের সময় ঈদের দিন এক সা খাদ্য দ্বারা সদকা আদায় করতাম। আর তখন আমাদের খাদ্য ছিল জব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর।  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে গমের ভালো ফলন ছিল না বিধায় আলোচিত চারটি পণ্য দ্বারাই ফিতরা আদায় করা হত। এরপর হযরত মুয়াবিয়ার (রাযি.) যুগে গমের ফলন বেড়ে যাওয়ায় গমকে আলোচিত চারটি পণ্যের সঙ্গে সংযোজন করা হয়। আর তখন গমের দাম ছিল বাকি চারটি পণ্যের তুলনায় বেশি। আর মূলত এই দাম বেশি থাকার কারণেই হযরত মুয়াবিয়া গমকে ফিতরার পণ্যের তালিকভুক্ত করেছিলেন। অতএব, গম দ্বারা আদায় করলে আধা সা বা এক কেজি ৬২৮ গ্রাম দিলেই ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। আর বাকি চারটি পণ্য অর্থাৎ খেজুর, জব, পনির ও কিশমিশ দ্বারা আদায় করার ক্ষেত্রে জনপ্রতি এক সা বা তিন কেজি ২৫৬ গ্রাম দিতে হবে।গম ছাড়া অন্য পণ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করলে এক সা পরিমাণ দিতে হচ্ছে, যা গমের ওজনের দ্বিগুণ এবং মূল্যের দিক দিয়েও অনেক তফাত। হাদীসে এক সা আদায় করার কথা উল্লেখ থাকার পরও তখন গমের মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় সাহাবারা আধা সা পরিমাণ গম আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাহলে এখন প্রশ্ন হলো, অন্য চারটি পণ্য হিসাব না করে শুধু গমের পরিমাণ হিসেবে ফিতরা আদায় করা যৌক্তিক হচ্ছে তো? হাদীসের আলোচনা থেকে এ কথাটি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, সাহাবারা খেজুর, জব, পনির ও কিশমিশ থেকে হলে এক সা পরিমাণ এবং গম থেকে হলে আধা সা পরিমাণ ফিতরা আদায় করতেন। কারণ তখন গমের দাম অন্যসব পণ্যের তুলনায় বেশি ছিল। আর বর্তমানে অন্য চারটি পণ্যের তুলনায় গমের দাম কম। এ পর্যন্ত হাদীসের এমন কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি যে সাহাবারা সবাই সর্বনি¤œ দামের বস্তু দ্বারা ফিতরা আদায় করেছেন। বরং তাদের সবার আগ্রহ ছিল সর্বাধিক দামি পণ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা। তাহলে বর্তমানে সবাই সর্বনি¤œ দামের পণ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করছে কেন? বেশি সম্পদশালী এবং কম সম্পদশালী নির্বিশেষে গম বা সর্বনি¤œ দামের পণ্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করার বিষয়টি বিবেকবর্জিত এবং হাদীস ও শরীয়তের নির্দেশনার পরিপন্থি। সবার উচিত সামর্থ্য অনুযায়ী সদকাতুল ফিতর আদায় করা এবং দায়সারা আদায় পদ্ধতি ত্যাগ করা।যার সামর্থ্য আছে উন্নতমানের খেজুর দ্বারা সে খেজুর দ্বারাই আদায় করবে। আর যার সামর্থ্য আছে কিশমিশ কিংবা জব দ্বারা আদায় করার সে তা দ্বারা আদায় করবে। যার গম দ্বারা আদায় করা ছাড়া অন্য পণ্য দ্বারা আদায় করার সামর্থ্য নেই সে গম দ্বারা ফিতরা আদায় করবে। বেশি সম্পদশালী এবং কম সম্পদশালী নির্বিশেষ গম বা সর্বনিম্ন দামের পণ্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করার বিষয়টি বিবেকবর্জিত এবং শরীয়তের নির্দেশনার পরিপন্থি।  ফিতরা কারা দেবেন?নারী-পুরুষ, স্বাধীন-পরাধীন, শিশু-বৃদ্ধ, ছোট-বড় সব মুসলিমের জন্য ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব। ইবনে উমর (রাযি.) থেকে জানা যায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক স্বাধীন-ক্রীতদাস, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় মুসলমানের যাকাতুল ফিতর এক ‘সা’ পরিমাণ খেজুর বা যব ফরজ করেছেন।  তিনি লোকদের ঈদের নামাযে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার আদেশ দিয়েছেন। ফিতরা দেওয়ার সামর্থ্য আছে (এক দিন ও এক রাতের খাদ্যের অতিরিক্ত পরিমাণ সম্পদ থাকলে) এ রকম প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজের ও পরিবারের সব সদস্যের পক্ষ থেকে ফিতরা প্রদান করা ফরজ, যাদের লালন-পালনের দায়িত্ব শরীয়ত কর্তৃক তার উপরে অর্পিত হয়েছে। যার নিকট এক দুই বেলার খাবার ব্যতীত অন্য কিছু নেই তার ফিতরা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।  কে ফিতরা পাবে?গরিব, দুস্থ, অসহায়, অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিরাই ফিতরার দাবিদার। তবে যার জন্য যাকাত খাওয়া জায়েয এবং যার ওপর যাকাত ওয়াজিব নয়, এমন ব্যক্তিকে ফিতরা প্রদান করা যাবে।  কাজের লোকের ফিতরা দেওয়াবেতনভুক্ত কাজের ব্যক্তির পক্ষে ফিতরা প্রদান করা মালিকের ওপর আবশ্যক নয়। তবে মালিক ইচ্ছা করলে কাজের লোককে ফিতরা প্রদান করতে পারবেন। তবে তিনি বেতন বা পারিশ্রমিক হিসাবে ফিতরা প্রদান করতে পারবেন না। যা দিয়ে ফিতরা দেওয়া যাবে আবু সাঈদ খুদরি (রাযি.) বলেন, অর্থ : আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে যাকাতুল ফিতর দান করতাম এক সা খাদ্যদ্রব্য কিংবা এক সা যব কিংবা এক সা খেজুর কিংবা এক সা পনির কিংবা এক সা কিশমিশ।  এই হাদীসে খেজুর ও যব ছাড়া আরো যে কয়েকটি বস্তুর নাম পাওয়া গেল তা হলো, কিশমিশ, পনির এবং খাদ্যদ্রব্য। উল্লেখ থাকে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিগত হওয়ার পর মুয়াবিয়া (রাযি.)-এর খেলাফতে অনেকে গম দ্বারাও ফিতরা দিতেন।  খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা দেওয়াসাহাবী আবু সাঈদ খুদরি বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায়, খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা প্রদানের কথা। যেহেতু চাল বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রধান খাদ্য সেহেতু চাল দিয়েও ফিতরা প্রদান করা যাবে। চালের বদলে ধান দিয়ে ফিতরা দিতে হলে ওজনের ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। কারণ এক সা ধান এক সা চালের সমমূল্যের হবে না। কোরআন থেকে জানা যায়, অর্থ : তোমরা খাদ্যের খবিস (নিকৃষ্ট) অংশ আল্লাহর পথে খরচ করার সঙ্কল্প করো না। কেননা, তোমরা স্বয়ং তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত নও।  তবে ধানের থেকে চাল দিয়ে ফিতরা প্রদান করা উত্তম। নিম্নোক্ত কিয়াস থেকে এই ব্যাপারে ধারণা পাওয়া যায়, যবের ওপর কিয়াস (অনুমান) খাটিয়ে ধানের ফিতরা জায়েয হবে না। কারণ ধান আদৌ আহার্য সামগ্রী ‘তাআম’ নয়। আহার্য বস্তুর ওপর কিয়াস করে যব বা খুরমার ফিতরা দেওয়া হয় না, মনসূস (কোরআন বা হাদীসে স্পষ্টভাবে উল্লেখিত) বলে দেওয়া হয়ে থাকে। তাআম বা আহার্য সামগ্রীরূপে ফিতরা দিতে হলে এক সা চাল দিতে হবে। টাকা দিয়ে ফিতরা দেওয়ানবীজীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুগে মুদ্রা হিসেবে দিরহাম প্রচলিত ছিল। দিরহামের দ্বারা কেনাকাটা, দান খয়রাত করা হত। তবু খুদরি বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায়, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্যবস্তু দিয়ে ফিতরা প্রদান করতেন। এ জন্য ইসলামবেত্তাদের বড় অংশ টাকা দিয়ে ফিতরা প্রদানের ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেন। ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের বরখেলাফ হওয়ার কারণে আমার আশংকা হচ্ছে যে, তা যথেষ্ট হবে না। তবে প্রয়োজনে টাকা দিয়েও ফিতরা আদায় করা বৈধ। বাংলাদেশের মুসলিমরা টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে চাইলে ২:৪০ (দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম) মধ্যমানের চালের মূল্য দিতে হবে। সা ও অর্ধ সা-এর বিবরণফিতরা প্রদানের পরিমাপ সংক্রান্ত আলোচনায় সা বহুল আলোচিত শব্দ। সা হচ্ছে আরব দেশে ওজন বা পরিমাপে ব্যবহƒত পাত্র। বাংলাদেশে যেমন ধান পরিমাপের জন্য একসময় কাঠা ব্যবহƒত হত। একজন মাঝামাঝি শারীরিক গঠনের মানুষ অর্থাৎ অধিক লম্বা নয় এবং খাটোও নয়, এই রকম মানুষ তার দুই হাত একত্রে করলে যে অঞ্জলি গঠিত হয়, ওই রকম পূর্ণ চার অঞ্জলি সমান হচ্ছে এক সা। হাদীস থেকে সুস্পষ্ট জানা যায় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সা পরিমাণ ফিতরা প্রদানের কথা। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং চার খলীফার মৃত্যুর পর মুয়াবিয়া (রাযি.) ইসলামী রাষ্ট্রের খলীফা নির্বাচিত হন এবং ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী মদীনা থেকে দামেস্ক স্থানান্তরিত করেন, তখন তারা গমের সঙ্গে পরিচিত হন। সেকালে সিরিয়ার গমের মূল্য খেজুরের দ্বিগুণ ছিল। তাই খলীফা মুয়াবিয়া একদা হজ বা উমরা করার সময় মদীনায় এলে মিম্বরে বলেন : আমি অর্ধ সা গমকে এক সা খেজুরের সমতুল্য মনে করি। লোকেরা তার এই কথা মেনে নেয়। এরপর থেকে মুসলিম জনগণের মধ্যে অর্ধ সা ফিতরার প্রচলন শুরু হয়। সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ সবার জন্য সমান?বড়ই পরিতাপের ব্যাপার! পুরো দেশের সব শ্রেণির লোক বছর বছর ধরে সর্বনিম্ন মূল্যের হিসেবে ফিতরা আদায় করে আসছে। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সকলেই ফিতরা দিচ্ছে একই হিসাবে জনপ্রতি ৬০/৭০ টাকা করে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় সকলে ভুলেই গেছে গম হচ্ছে ফিতরার পাঁচটি দ্রব্যের একটি—যা সর্বনিম্ন মূল্যের।উত্তম হলো, নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি মূল্যের খাদ্যবস্তুকে মাপকাঠি ধরে ফিতরা আদায় করা। কেননা সদকার মূল লক্ষ্যই হলো গরিবদের প্রয়োজন পূরণ ও তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ। এ ছাড়া আদায়কারীর সামর্থ্যকেও বিবেচনায় রাখা উচিত। কেননা কেউ এক হাজার টাকা মূল্যের খেজুর খেতে অভ্যস্ত হয়ে যদি পচিশ/ত্রিশ টাকা মূল্যের গমের হিসেবে ফিতরা দেন—তবে তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? সে প্রশ্ন বিবেকের কাছে থেকেই যায়।আরও পড়ুন- লাইলাতুল কদর ও এ রাতের করণীয়?- যাকাত কাকে দিবেন এবং কাকে দিতে পারবেন না- যাকাত না দেওয়ার পরিণাম ও শাস্তি

post
এনআরবি লাইফ

যাকাত না দেওয়ার পরিণাম ও শাস্তি

যাকাত ইসলামের স্তম্ভ ও অবশ্য পালনীয় বিধান। এ বিধান পালন না করার অর্থ আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা। যাকাত ফরজ হওয়ার মতো সম্পদের মালিক হওয়ার পরও যারা এ বিধান পালন করবে না পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহে তাদের জন্য ইহকালীন লাঞ্ছনা-গঞ্ছনা ও পরকালীন শাস্তির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। যার সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিম্নরূপ :যাকাত আদায় না করার ইহকালীন শাস্তিকোরআন ও হাদীসে যাকাত আদায় না করার ইহকালীন শাস্তির যে বর্ণনা এসেছে তা হলো, ১. আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, আমার রহমত সব কিছুতে পরিব্যাপ্ত। তা আমি সেই লোকদের জন্য লিখব যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় ও আমার আয়াতসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। ২. আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত হওয়া : যে ব্যক্তি আল্লাহকে সাহায্য করেন তিনি তাকে সাহায্য করেন। যাকাত প্রদান আল্লাহকে সাহায্যকারীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে এসেছে, যে আল্লাহকে সাহায্য করবে আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করবেন; নিঃসন্দেহে আল্লাহ শক্তিসম্পন্ন, সর্বজয়ী। তারা সেই সব লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে ক্ষমতা প্রদান করলে তারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে, সৎকাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজে নিষেধ করে।  অতএব যাকাত আদায় না করলে আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত হতে হয়। ৩. নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী করে নেওয়া : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত দানে বিরত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে আদিষ্ট হয়েছিলেন। ফলে যাকাত না দেওয়ার অর্থ নিজের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে নেওয়া। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অর্থ : আমি লোকজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দিবে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই ও মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং নামায প্রতিষ্ঠা করবে ও যাকাত আদায় করবে। যখন তারা এ কাজগুলো করবে তখন তারা আমার হাত থেকে তাদের জান-মাল রক্ষা করবে, অবশ্য তাদের চূড়ান্ত বিচারের ভার আল্লাহর উপর। ৪. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পৃষ্ঠপোষকতা হারানো : আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যাদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন তাদের মধ্যে যাকাত প্রদানের গুণাবলি থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, তোমাদের একমাত্র বন্ধু আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও ঈমানদারগণ যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং তারা রুকুকারী। ৫. জাতীয় বিপর্যয় : যাকাত আদায় না করার কারণে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জাতীয় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়। হাদীসে এসেছে, যে সমাজের লোকেরা যাকাত দিতে অস্বীকার করবে আল্লাহ তাদের কঠিন ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত করবেন।যে জাতি যাকাত দেয় না মহান আল্লাহ তাদের উপর বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেন। স্থল ও জলভাগে ধন-সম্পদ বিনষ্ট হয় শুধুমাত্র যাকাত আটকে রাখার কারণে। যাকাত আদায় না করার পরকালীন শাস্তি  যাকাত দানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারীকে পরকালে কঠিন ও ভয়ংকর আজাবের মুখোমুখি হতে হবে। পবিত্র কোরআন ও হাদীসে তাদের সে আজাবের চিত্র ফুটে উঠেছে, ১. ধন-সম্পদ আগুনে গরম করে সেঁক দেওয়া : এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, এবং যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জিভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) ‘এটা তা-ই যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো। ২. বিষধর সাপের দংশন : মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন আর সে তার যাকাত দেয় না, কেয়ামতের দিন ঐ সম্পদকে দু’টি বিষের থলিবিশিষ্ট মাথায় টাকপড়া মারাত্মক বিষধর সর্পে পরিণত করা হবে, যা তাকে পেঁচিয়ে তার চোয়ালে আঘাত করে করে বলতে থাকবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার গচ্ছিত ধন...। ৩. কেয়ামতে বেড়ি পরানো : এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, আর আল্লাহ যাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে, তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কেয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। আর আসমানসমূহ ও জমিনের উত্তরাধিকার আল্লাহরই জন্য। আর তোমরা যা আমল করো, সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত। ৪. পশু দ্বারা পদদলিত : হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি নিজের উটের হক আদায় করবে না, সে উট দুনিয়া অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হয়ে খুর দিয়ে আপন মালিককে পিষ্ট করতে আসবে, যে ব্যক্তি নিজের ছাগলের হক আদায় করবে না, সে ছাগল দুনিয়া অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হয়ে খুর দিয়ে আপন মালিককে পদদলিত করবে এবং শিং দিয়ে আঘাত করবে।... রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যেন কেয়ামতের দিবসে কাঁধের উপর চিৎকাররত ছাগল বহন করে আমার নিকট এসে এ কথা না বলে যে, হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। তখন আমি বলব, তোমাকে করার আমার কোনো ক্ষমতা নেই। আমি তো এ বিষয়টি পেঁৗঁছে দিয়েছিলাম। আর তোমাদের কেউ যেন কেয়ামতের দিবসে কাঁধের উপর চিৎকাররত উট বহন করে আমার নিকট এসে এ কথা না বলে যে, হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমাকে শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। তখন আমি বলব, তোমার জন্য কিছু করার কোনো ক্ষমতা আমার নেই। আমি তো এ সতর্কবার্তা তোমাদেরকে (আগেই) পৌঁছে দিয়েছিলাম। ৫. উত্তপ্ত পাথর ব্যবহার : হযরত আবু যর (রাযি.) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করে বলেন, যারা সম্পদ জমা করে রাখে, তাদেরকে এমন গরম পাথরের সুসংবাদ দাও যা তাদেরকে শাস্তি প্রদানে জাহান্নামে উত্তপ্ত করা হচ্ছে। তা তাদের স্তনের বোঁটার উপর স্থাপন করা হবে আর তা কাঁধের পেশী ভেদ করে বের হবে এবং কাঁধের উপর স্থাপন করা হবে, তা নড়াচড়া করে সজোরে স্তনের বোঁটা ছেদ করে বের হবে। ৬. আগুনের চুড়ি পরিধান : গহনার যাকাত না দিলে তার শাস্তির বর্ণনা এসেছে এভাবে, আমর ইবন শুয়াইব (রাযি.) তাঁর পিতা, তিনি তার দাদার সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, একটি মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তার কন্যাকে নিয়ে এলেন যার হাতে ছিল দু’টি স্বর্ণের মোটা চুড়ি। তিনি বললেন, তুমি কি এটার যাকাত দাও? সে বলল, না। তিনি বললেন, এ দু’টির পরিবর্তে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তোমাকে দু’টি আগুনের চুড়ি পরিধান করলে তা কি তোমাকে খুশী করবে? বর্ণনাকারী বলেন, এরপর সে চুড়ি দু’টি খুলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট রেখে বলল, এ দু’টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য।  উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয়, যাকাত ইসলামের এক বাধ্যতামূলক বিধান, যা আদায় না করলে ইহকালীন অশান্তি, লাঞ্ছনা-গঞ্ছনা ও পরকালীন শাস্তি অবধারিত।আরও পড়ুন** যাকাত কাকে দিবেন এবং কাকে দিতে পারবেন না

post
এনআরবি লাইফ

যাকাত কাকে দিবেন এবং কাকে দিতে পারবেন না

যাকাত ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। এ বিধান পালনে প্রয়োজন সঠিক পথ ও পন্থা। যাকাতের বণ্টন সঠিক না হলে যাকাত আদায় হবে না। পবিত্র কোরআনে আট খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ পাক কোরআনে বলেন, যাকাত কেবল ফকির মিসকিন ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণে জর্জরিত ব্যক্তিদের জন্য, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর নির্ধারিত বিধান এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়। ১. ফকির : যে ব্যক্তি মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষা চায়, যারা সর্বদা অভাব অনটনে জীবন কাটায়, নিজ জীবিকার জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী এরাই ফকির।২. মিসকিন : একজন দরিদ্র ভদ্রলোককে বুঝায়, যার বাহ্যিক অবস্থা দেখেও অভাবগ্রস্ত মনে হয় না, স্বীয় আত্মসম্মান বোধের জন্য অপরের নিকট সাহায্য চাইতে পারে না অথচ কঠোর শ্রম ও প্রাণান্তর চেষ্টার পরও সংসারের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে না। সমাজে তথা নিজ আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে এরকম কেউ থাকলে তারাই হকদার বেশি।৩. যাকাত আদায়কারী কর্মচারী : সরকারিভাবে নিযুক্ত যাকাত আদায় ও বিতরণের কর্মচারী। বর্তমানে এই খাত বাংলাদেশে প্রযোজ্য নয়।৪. মন জয় করার জন্য/নওমুসলিম : যাদের অন্তর ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট তবে সামাজিক বা আর্থিক ভয়ে ইসলাম ধর্মে আসছে না তাদের সাহায্য করে প্রকাশ্যে দলভুক্তি করা অথবা যারা নওমুসলিম হয়েছে অন্য ধর্ম ছাড়ার কারণে পারিবারিক সামাজিক ও আর্থিকভাবে বঞ্চিত হয়েছে তাদের সাহায্য করে ইসলামে সুদৃঢ় করা। যেমন, সফওয়া ইবনু উমাইয়াকে হুনাইন যুদ্ধের গনিমত দিয়েছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু সুফিয়ান ইবনু হারবকে, আক্বা ইবনু হাবেসক এবং উয়াইনাহ ইবনু মিহসানকে যাকাত দিয়েছিলেন। ৫. ঋণমুক্তির জন্য : জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সঙ্গত কারণে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঋণমুক্তির জন্য যাকাত প্রদান করা যায়। সেসব গরিব যারা ঋণ করেছে এবং শোধ করার সামর্থ্য নেই তাদের যাকাতের টাকা দিয়ে সাহায্য করা যাবে। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ ঋণ খেলাফি ধনী এর আওতায় আসবে না যারা ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে শোধ করতে পারছে না। তাদের ওই ঋণ জীবন বাঁচানোর তাগিদে নেওয়া হয়নি। বরং তা নেওয়া হয়েছিল নিজেদের বিলাসিতাকে পরিপূর্ণ করার মানসে।৬. দাসমুক্তি : কৃতদাস মুক্তির জন্য—এ-প্রথা এখন প্রযোজ্য নয়।৭. ফি সাবিলিল্লাহ বা আল্লাহর পথে : সাবিলিল্লাহ শব্দের অর্থ ব্যাপক। যেসব কাজ দ্বারা আল্লাহর সন্তোষ ও নৈকট্য লাভ করা যায় তাকেই ফি-সাবিলিল্লাহ্ বুঝায়। অন্যকথায় মুসলিম জনগণের কল্যাণকর যাবতীয় কাজ যার ফলে দীন ও রাষ্ট্রের স্থিতি আসে এমন কাজ। যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে। বর্তমানে জিহাদের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কাজেই এটি একটি বিতর্কিত বিষয়। এতিমখানায় দেওয়া যেতে পারে যেখানে গরিব বাচ্চারা লেখাপড়া করে। তবে প্রাপ্ত যাকাত বা ফিতরার টাকা থেকে শিক্ষকদের বেতনভাতা দেওয়া যাবে না। ৮. মুসাফির/প্রবাসী : পথে বা প্রবাসে মুসাফির অবস্থায় কোনো ব্যক্তি বিশেষ কারণে অভাবগ্রস্ত হলে ওই ব্যক্তির বাড়িতে যতই ধন-সম্পদ থাকুক না কেন তাকে যাকাত প্রদান করা যাবে। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে না ১. নেসাব পরিমাণ মালের অধিকারী বা ধনীকে যাকাত দেওয়া যাবে না (মুসাফির ব্যতীত)। যে ব্যক্তির কাছে যাকাতযোগ্য সম্পদ নেসাব পরিমাণ নেই কিন্তু অন্য ধরনের সম্পদ, যাতে যাকাত আসে না। যেমন ঘরের আসবাবপত্র, পরিধেয় বস্ত্র, জুতা ইত্যাদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ও নিসাবের সমমূল্য পরিমাণ আছে, তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না। ২. যাকাতের টাকা কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা যাবে না। ব্যয় করা হলে যাকাত আদায় হবে না। যেমন, রাস্তাঘাট, পুল নির্মাণ করা, কূপ খনন করা, বিদ্যুৎ-পানি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। কেননা শরীয়তে যাকাতের বিধান দেওয়া হয়েছে ব্যক্তির প্রয়োজন পূরণের জন্য; সামাজিক প্রয়োজন পূরণের জন্য নয়। যাকাতের টাকা দ্বারা মসজিদ-মাদরাসার বিল্ডিং নির্মাণ করা, ইসলাম প্রচারের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যয় করা, ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা দেওয়া, ওয়াজ-মাহফিলের জন্য ব্যয় করা বা এগুলোতে সহায়তা দেওয়া, মিডিয়া তথা রেডিও, টিভি চ্যানেল করা জায়েয নয়; বরং যাকাতের টাকা তার হকদারকেই মালিক বানিয়ে দিতে হবে। অন্য কোনো ভালো খাতে ব্যয় করলেও যাকাত আদায় হবে না। ৩. নিজের বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, পরদাদা প্রমুখ ব্যক্তিÑ যারা তার জন্মের উৎস তাদের নিজের যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। এভাবে নিজের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনী এবং তাদের অধস্তনকে নিজ সম্পদের যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। ৪. সম্পদশালীর নাবালক পুত্র-কন্যাকে যাকাত দেওয়া যাবে না। ৫. কুরাইশ গোত্রের বনু-হাশেমের অন্তর্গত আব্বাস, জাফর, আকীল (রাযি.)-এর বংশধরের জন্য যাকাত গ্রহণ বৈধ নয়। ৬. অমুসলিম ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যাবে না। ৭. যেসব প্রতিষ্ঠানে ধনী-গরিব সবাই সেবা পায় সেখানে যাকাত দেওয়া যাবে না। যেমন : মসজিদ, মাদরাসা (এতিম ফান্ড বা লিল্লাহ বোডিং ব্যতীত), শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আশ্রয়কেন্দ্র, সেতু, টিউবয়েল, কূপ, পুকুর, রাস্তাঘাট ইত্যাদি।৮. দরিদ্র পিতামাতা, সন্তান, দাদা, নানা, স্বামী বা স্ত্রীকে যাকাত দেওয়া যাবে না।  ৯. প্রতিষ্ঠানের বেতনভুক্ত কর্মচারী প্রতিষ্ঠানের এতিমখানা/লিল্লাহ বোডিং এর জন্য যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত হলে তাকে ব্যক্তিগতভাবে কিছু হাদিয়া/উপঢৌকন হিসাবে দেওয়া যাবে না।  ১০. নিজ চাকর চাকরাণীকে যাকাতের টাকায় বেতন-ভাতা দেওয়া যাবে না। 

About Us

NRBC is an open news and tele video entertainment platform for non-residential Bengali network across the globe with no-business vision just to deliver news to the Bengali community.